পাবনায় তিন সন্তানের জননীকে দু’দফায় গণর্ধষণের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত অভিযোগে ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন; ধর্ষণ মামলার ১ নং আসামী রাসেল ও ৪ নং আসামী শরিফুল ইসলাম ওরফে ঘন্টু। মামলা দায়েরের পর বুধবার সকালে জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি থেকে শরিফুল ইসলাম ওরফে ঘন্টুকে ও মঙ্গলবার বিকেলে রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা নং ৩৪। মামলার আসামীরা হলেন; পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামের আলী আকবরের ছেলে রাসেল (২৬), গাতী গ্রামের হোসেন ড্রাইভার (৩৫) পিতা- অজ্ঞাত, গাতী সাতমাইল গ্রামের ফজলুর ছেলে ওসমান আলী (৩৫), রানীগ্রামের সিরাজ মাস্টারের ছেলে শরিফুল ইসলাম ওরফে ঘন্টু (৪৫) ও ফলিয়া গ্রামের কালামের ছেলে সঞ্জু (২৭।

ধর্ষণের অভিযোগকারী ওই গৃবধূর মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের যশোদল গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেলের সাথে ওই তিন সন্তানের জননী ওই গৃহবধূর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরই জের ধরে ২৯ আগস্ট রাতে প্রেমের টানে ঘর থেকে বের হয়ে যান ওই গৃহবধূ রাসেলের সাথে। রাসেল ওই গৃবধূকে নিয়ে ওসমানের কাছে যান। সেখানে রাসেল, ওসমান ও হোসেন ড্রাইভার মিলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিক বার ধর্ষণ করেন। ঘটনার মিমাংসার জন্য ওই গৃহবধূ স্থানীয় শরিফুল ইসলাম ওরফে ঘন্টুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে যান। এ সময় ঘন্টু ও তার সহযোগি সঞ্জু ওই অফিস কক্ষে আটকে রেখে তিনদিন ধরে একাধিক বার ধর্ষণ করে। থানার ওই অভিযোগে গৃহবধূ দাবী করেন, ঘন্টু ও সঞ্জু তাকে একাধিক বার পালা করে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করছিল। এ সময় বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে সুকৌশলে অফিস পালান।

অসুস্থ অবস্থায় গত ৫ আগস্ট ওই গৃহবধূর বাবা তাকে গুরুতর অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা ওই গৃহবধূর বাবা মেয়ের মুখে থেকে সব কথা শোনার পর ওই রাতেই থানাতে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু পুলিশ ওই অভিযোগ আমলে নেয়নি। ধর্ষিতা ও ধর্ষণের অভিযুক্ত রাসেলের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, গত ৫ আগস্ট রাতে পাবনা সদর থানার ওসি ওবাইদুল হক জোরপূর্বক ওই নারীর সাথে ধর্ষণের অভিযুক্ত রাসেলকে বিয়ে দিয়ে দেন থানার ভেতরে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে। গণমাধ্যমের মুখে পড়ে অবশেষে জেলা পুলিশ বিষয়টি মামলা হিসেবে গ্রহণ এবং ঘটনার তদন্তে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়াটার) ফিরোজ আহমেদকে প্রধান এবং কোর্ট ইন্সপেক্টর ও ডিআই-১ কে সদস্য করে কমিটির গঠন করা হয়। অন্যদিকে পাবনা সদর থানার ওসি ওবাইদুল হককে কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হয়।

জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম-পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শণ ও ধর্ষণের আলামত উদ্ধার করেছেন। পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আছাদুজ্জামান জানান, ঈশ্বরদী উপজেলার মূলাডুলি থেকে মামলার আসামী শরিফুল ইসলাম ওরফে ঘন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মামলার আসামী রাসেলকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম-পিপিএম বলেন, মামলাটি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার মূল উদঘাটন করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পুলিশ কাজ করছে।