গাজীপুর মহানগরীর রাজদীঘিরপাড় এলাকায় কিশোর গ্যাং দ্বন্ধে এক কিশোর খুনের ঘঁনায় “ভাই-ব্রাদার্স” গ্রুপের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১এর সদস্যরা। বুধবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- “ভাই-ব্রাদার্স” গ্রুপের মূল হোতা মোঃ রাসেল মিয়া (১৮), মোঃ সৌরভ (২১), মোঃ আশরাফুল ইসলাম (১৭), মোঃ জোবায়ের (১৭), মোঃ আমির হামজা (১৯) ও মোঃ সুজন পাটোয়ারি (১৭)। তাদের বাড়ি গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ২টি চাপাতি ও ১টি ছুরা উদ্ধার করা হয় এবং ৫টি মোবাইল ফোন ও নগদ ৮ হাজার ২০ টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

র‌্যাব-১এর গাজীপুরের কোম্পানী কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে সামান্য ‘তুই’ বলা’কে কেন্দ্র করে গাজীপুর সদর থানাধীন রাজদীঘিরপাড় এলাকায় দুই কিশোর গ্যাং গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে স্থানীয় ফকির আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম ওরফে নুরুকে (১৬) কুপিয়ে খনি করে ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দুই দিন আগে ভিকটিম নুরুল ইসলামের ‘দীঘিরপাড়’ গ্রুপের ৬-৭ জন সদস্য স্থানীয় বালুর মাঠ এলাকায় আড্ডা দেয়ার সময় একই এলাকার রাসেল এর “ভাই-ব্রাদারস” গ্রুপের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। জুনিয়র গ্রুপের কাছে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় রাসেলের “ভাই ব্রাদারস” গ্রুপের সদস্যরা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে এবং উপযুক্ত সুযোগ খুঁজতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে ঘটনার দিন “ভাই-ব্রাদারস” গ্রুপের ১০-১২ জন মিলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ‘রাজদীঘির পাড়’ গ্রুপের উপর হঠাৎ চড়াও হয়। এসময় ভিকটিম নুরুল ইসলাম তাদের আক্রমন থেকে বাচাঁর জন্য পাশের পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ও অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। “ভাই-ব্রাদারস” গ্রুপের সদস্যরা অন্যান্যদের ধরতে না পেরে ভিকটিম নুরুল ইসলামকে পুকুর থেকে তুলে ধারালো চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে নিহতের পিতা গাজীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাদের গ্রুপের অধিকাংশ সদস্যই স্থাানীয় বিভিন্ন স্কুলে ৯ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এবং বেশ কয়েকজন আছে যারা পড়ালেখা করে না। একই এলাকায় বসবাসের সূত্রে এসব কিশোর গ্যাং গঠিত হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র স্কুল পর্যায়ে ছোট দল করে ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গঠিত হলেও সময়ের সাথে তারা এলাকা ভিত্তিক গ্যাং এ পরিনত হয়। এরপর তারা ঐ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে চেষ্টা করে পাশাপাশি চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন বেআইনী কাজের সাথে জড়িত হয়। আধিপত্য বিস্তারে সুবিধার জন্য তারা স্থাানীয়ভাবে বিশেষ প্রভাব আছে এমন কিশোরদেরও দলে নেয় যাদের অধিকাংশই পড়াশোনার মাঝ পথে ঝরে পড়েছে। একই এলাকায় একাধিক কিশোর গ্যাং থাকায় তারা একে অপরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। যার ফলে তারা ছোট খাট বিষয় নিয়ে অধিকাংশ সময় দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে। এলাকার নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে এবং বিপক্ষ গ্রুপকে ভীত সন্ত্রস্ত করতেই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে তারা স্বীকার করে।