গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর পাবনা সদর থানায় তাদের একজনের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন উপপরিদর্শক (এসআই) একরামুল হক। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সার্কেল (সদর) ইবনে মিজান। তিনি বলেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেই ওসি ও এসআইয়ের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়।

এ মামলায় আরও দুই অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। আটক দুইজন হলেন, মামলার দুই নম্বর আসামি হোসেন আলি ও ৫ নম্বর আসামি সঞ্জু। এ নিয়ে এ মামলার মোট পাঁচ আসামির মধ্যে চারজন গ্রেপ্তার হলো। এদিকে, মামলাটির এক নম্বর আসামি রাসেল আহমেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে গত সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়। আর গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় এ ঘটনার অন্যতম কারিগর আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম ঘন্টুকে।

গতকাল বুধবার পাবনায় গৃহবধূ ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হলে স্বপ্রণোদিত আদেশ চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল। তার সঙ্গে ছিলেন গাজী ফরহাদ রেজা ও রোহানী সিদ্দিকা। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চে এ আবেদনটি তুলে ধরেন আইনজীবীরা। এ সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে আমরাও বিষয়টা নজরে রাখছি।’

প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে আদালত আরও বলেন, ‘যেহেতু এটা প্রশাসনিক বিষয় এবং যেহেতু কর্তৃপক্ষ অ্যাকশন নিচ্ছে, দেখেন প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়। যদি প্রশাসনের ব্যবস্থা সন্তোষজনক না হয় তখন আপনারা আগামী সপ্তাহে আসেন আমরা দেখব। আদালত এও বলেছেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আমরাও বিষয়টা নজরে রাখছি।’

তার আগে, গত সোমবার মামলা না নিয়ে ‘ধর্ষণের শিকার’ গৃহবধূর সঙ্গে থানা চত্বরে ‘ধর্ষণকারীর’ বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর পাবনা সদর থানার ওসি ওবাইদুল হকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে এ ঘটনায় মামলা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে; গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

তিন সন্তানের জননী ওই গৃহবধূর অভিযোগ, গত ২৯ আগস্ট তাকে প্রতিবেশী রাসেল আহমেদ তার বাড়িতে নিয়ে এক সহযোগীসহ পালা করে ধর্ষণ করে। দুদিন পর তাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে তিন দিন আটকে রাখা হয় এবং সেখানে আরও ৪/৫ জন তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

বিষয়টি ওই গৃহবধূ স্বজনদের জানালে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ রাসেলকে আটক করে। কিন্তু মামলা নথিভুক্ত না করে পুলিশ ওই রাতেই রাসেলের সঙ্গে গৃহবধূর বিয়ে দিয়ে দেয়।