গাজীপুরে মাইওয়ান ইলেকট্রনিক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের কারখানায় শুক্রবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ৬ ঘন্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৬ টি ইউনিটের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ড্যাম্পিংয়ের কাজ করছিল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুনে ওই কারখানা ভবনের ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় প্রস্তুত করে রাখা ফ্রিজ, টিভি, রাইস কুকার, ইস্ত্রিসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক পণ্য ও মালামাল পুড়ে গেছে ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, এলাকাবাসী ও কারখানা সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ধীরাশ্রম এলাকাস্থিত মাইওয়ান ইলেকট্রনিক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের কারখানার ৬ তলা ভবনের ৫ম তলায় শুক্রবার শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে আগুনের সূত্রাপাত হয়। কারখানার ৭ম তলায় টিন সেড রয়েছে। ভবনটির ৬ষ্ঠ তলায় কারখানার গুদামে তৈরি ফ্রিজ, টেলিভিশন, রাইস কুকারসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী রফতানী ও বিক্রির জন্য এবং ৫ম তলায় কার্টুন সামগ্রী মজুদ করে রাখা ছিল। এদিন সাপ্তাহিক ছুটির কারণে কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সকালে ৫ম তলায় আগুনের সুত্রাপাত হওয়ার পর আগুনের লেলিহান শিখা পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় কারখানার নিরাপত্তা কর্মী ও স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন ওই ভবনের ৫ম তলা ছাড়িয়ে ৬ষ্ঠ তলার পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের জয়দেবপুর, টঙ্গী, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর ও উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন ষ্টেশনের ১৬টি ইউনিটের কর্মীরা ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। কারখানার নিজস্ব পানির উৎস ও অগ্নিনির্বাপন সামগ্রী পর্যাপ্ত না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হয়। এক পর্যায়ে পাশর্^বর্তী মার্কওয়্যার লিমিটেড কারখানার ডোবাসহ আশেপাশর বিভিন্নস্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকে। প্রায় ৬ ঘন্টা চেষ্টার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুন পুরোপুরি নেভাতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ড্যাম্পিংয়ের কাজ করছিল তারা। আগুনে ওই কারখানা ভবনের ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় প্রস্তুত করে রাখা ফ্রিজ, টিভি, রাইস কুকার, ইস্ত্রিসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক পণ্য ও মালামাল পুড়ে গেছে ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৭ম তলার টিনসেডও। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহতের কোন ঘটনা না ঘটলেও আগুন নেভাতে গিয়ে রুবেলসহ দু’জন আহত হয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ জানান, কারখানা ভবনটি ৬ তলা বিশিষ্ট। এর ৫ তলাতে আগুনের সুত্রপাত হয়। কিন্তু কিভাবে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। আগুনে কারখানা ভবনের ৬ষ্ঠ তলা ও ৫ম তলা পুড়ে গেছে। দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেই কারখানাটিতে। পাশের মার্কওয়্যার লিমিটেডের ডোবা থেকে পানি সংগ্রহ করে আগুন নেভানোর কাজ করতে হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহতের খবর পাওয়া যায়িনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রাপাত হয়েছে।

কোম্পানির হেড অব মিডিয়া কে এম জি কিবরিয়া জানান, কারখানায় তৈরি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়ান্স প্রোডাক্ট ষষ্ঠ তলায় মজুদ করে রাখা ছিল। তবে সেখানে কত টাকার পণ্য সামগ্রী ছিল সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি।

মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেডে উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার কারখানাটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কারখানাটিতে ফ্রিজ, টিভি, রাইস কুকার ও ইস্ত্রিসহ প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রিক পণ্য তৈরী ও সংযোজন করা হতো। প্রায় দুই হাজার কর্মী এখানে কাজ করেন। উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী কারখানা ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় মজুদ রাখা ছিল। কিভাবে আগুন লাগতে পারে বা কী পরিমাণ মালামাল ওই গুদামে ছিল তা এ মুহুর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকা ও অগ্নি নির্বাপনের মহড়া না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।

মাই ওয়ান ইলেকট্রনিক্স ও মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, ওই সময় কারখানায় কাজ বন্ধ ছিল। কীভাবে ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় আগুন লাগল তা আমরা এখনও বুঝতে পারছি না।

টঙ্গী কলকারাখানা অধিদপ্তরের সহকারী মহা-পরিদর্শক মোতালিব মিয়া জানান, এই কারখানায় নিয়মিত অগ্নি নির্বাপন মহড়ার আয়োজন করা হতো না। ছয় তলার ওপরে গুদাম রাখারও নিয়ম নেই। কারখানায় ফায়ার অ্যালার্ম ও অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ছিল না। এ ব্যাপারে প্রায় তিন সপ্তাহ (আনুমানিক ২০/২২দিন) আগেও আমরা নোটিশ দিয়েছিলাম। নোটিশের বিপরীতে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি। এ কারণে কলকারখানা অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ডিভিশনের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনটির ভেতরে ঢুকে আগুন পুরোপুরি নেভানোর জন্য ড্যাম্পিংয়ের কাজ করছে। তবে এখনো আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি।‘

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল্লাহকে (এডিসি-শিক্ষা) প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সংরক্ষিত আসনের এমপি শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।