প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর করার কথা রয়েছে আগামী ৩ থেকে ৬ অক্টোবর। সে সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি। হিন্দুস্তান টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়াদের নিয়ে ঢাকার উদ্বেগ এই সফরের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বর্তমান মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এবারেই প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে ভূমিধস জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আর গত জুনে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেছেন মোদি। দুই নেতার অধীনে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে। যৌথভাবে বেশ কিছু প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন দুই নেতা। বিশেষ করে দুই দেশের সংযোগ স্থাপনে নানা প্রকল্প চালু হয়েছে তাদের মেয়াদে। দিল্লি সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও ৪ অক্টোবর বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভারতীয় অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা এমন এক সময়ে ভারত সফর করছেন, যখন আসামের নাগরিক তালিকাকে (এনআরসি) ঘিরে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। ভারত দাবি করে আসছে তালিকা থেকে বাদ পড়ারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে স্থায়ী হওয়া অবৈধ অভিবাসী। তবে বাংলাদেশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

শেখ হাসিনার সফর সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় শেখ হাসিনা আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিদের নিয়ে ঢাকার উদ্বেগ তুলে ধরবে বলে মনে করা হচ্ছে। আসামের রাজনীতিবিদদের প্রকাশ্য মন্তব্যের কারণেই এই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশকে বোঝাবে যে ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। তবে গত আগস্টে নিজের প্রথম ঢাকা সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, আসামের অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিত করা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। গত বৃহস্পতিবার জয়শঙ্কর বলেন, আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষের ভাগ্য নির্ধারণী প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাদ পড়া ব্যক্তিদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল এবং উচ্চ আদালতে আপিলের অধিকার আছে।

তালিকা প্রকাশের পর ভারতের ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার সমন্বয়কারী ও আসামের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু এবং তারা আমাদের সহায়তা করে আসছে। আমরা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে উপস্থাপন করলে তারা বরাবরই তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। এই সংখ্যাটি বেশি বড় না, তবে এখন আমরা তাদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। হেমন্ত বিশ্ব শর্মার মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিনকে বলেন, এনআরসির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি আবারও বলছি, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমি জানি না এই বিষয়ে কে কী বলেছে। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানালে, আমরা জবাব দেব। সবমিলে আমি বলতে পারি, ১৯৭১ সালের পর কেউ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়নি। হতে পারে ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে তারা (মূলত বাংলাভাষীরা) আসামে স্থায়ী হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নয়। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভারত আমাদের সঙ্গে আছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। তারা আমাদের বন্ধু, কিন্তু এনআরসি নিয়ে উদ্বেগের ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, ১৯৭১ সালের পর কেউ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়নি। আমি মনে করি না ভারত সরকার কাউকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেবে।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী, নাগরিক তালিকা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ফেরাতে ভারতের সমর্থন চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারতের অর্থায়নে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা এবং নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে। ওই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার ওই সফরে দুই দেশই সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা জোরালো করবে বলেও আভাস দেওয়া হয়েছে ।