টঙ্গীতে এক ‘ডিসকোবার’ এ অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করার অভিযোগে তরুণী ও যৌণকর্মী এবং খদ্দেরসহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ। এসময় বিপুল পরিমাণ নগদ টাকাসহ মাদক দ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। অভিযানকালে ভবনের তিনতলা থেকে লাফিয়ে পালাতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে পড়ে হোটেলের এক কর্মী ঝলসে দগ্ধ হয়। এছাড়াও একই থানা এলাকার এক বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ অভিযান চালানো হয়।

পুলিশ জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী এলাকার শরীফ কিয়াম উদ্দিন মাস্টার রোডের জাভান আবাসিক হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ডিসকোবার পরিচালিত হয়ে আসছিল। হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ শাহেদ বাবু, নাচ গান ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন ও মুনসুর আহমেদের নেতৃত্বে এ ডিসকোবার পরিচালনা করছিলেন। ডিসকোবার’এ প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে সারারাত ধরে অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদকের রমরমা ব্যবসা ও উচ্চ শব্দে নাচ-গান পরিচালিত হতো। এতে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠে। এলাকাবাসীর একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বৃহষ্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. কামাল হোসেন ও ইন্সপেক্টর (অপারেশন) বাবু সুব্রত কুমার পোদ্দারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই ডিসকোবার’এ অভিযান চালায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে অসামাজিক কার্যকলাপ করার অভিযোগে ১২জন তরুণী ও যৌণকর্মী এবং ৬জন খদ্দেরসহ মোট ১৮ জনকে আটক করা হয়। পুলিশ ওই ডিসকোবার থেকে ৩৩ বোতল বিদেশী মদ ও ৬০ ক্যান বিয়ার এবং নগদ একলাখ ৫হাজার টাকা জব্ধ করা হয়। অভিযানকালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে ভবনের তিনতলা থেকে নীচে লাফ দেয় ডিসকোবার’র হিসাবরক্ষক মাহাবুবুর রহমান (৪০)। এসয় বিদ্যুতের তারের উপর পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার শরীর ঝলসে যায়। স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

আটককৃতরা হলো- পলাশ (৪০), জুয়েল রানা (৩২), রাফি রহমান (৪২), আদনান (৩০), ইয়াছিন (২৮), আলিম মোল্লা হোসেন (৩৮), অঞ্জনা আক্তার (২০), আখি (২০), জান্নাত (২৩), রিয়ামনি (২০), নিশা (২০), সাথী আক্তার (২০), অঞ্জনা আক্তার নুপুর (২৪), আফরিন (২০), মনি (২০), জিন্নাত আক্তার (৩০), কলি আক্তার (২০) ও ফারিয়া আক্তার (২২)।

এব্যাপারে হোটেল মালিক মো. বাদল শেখ জানান, আমার হোটেলে বারের সরকারী অনুমোদন রয়েছে। তথাপি আইন-শৃংখলা বাহিনী হোটেলে অভিযান চালিয়ে মালামাল নিয়ে গেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) মোঃ মনজুর রহমান জানান, বার কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে আবাসিক হোটেলে ডিসকোবার পরিচালনা করে আসছিল। সেখানে মাদক বিক্রি ও সেবনসহ অসামাজিক কার্যকলাপ চলতো। বার কর্তৃপক্ষ লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে বলে দাবি করলেও অভিযানকালে তারা কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।
অপর দিকে একই রাত ১২ টার দিকে টঙ্গীর দত্তপাড়া হাউজ বিল্ডিং এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ৯৬ ক্যান বিয়ার ও ১২ বোতল বিদেশী মদসহ মিলন (৪০) ও মহসিনকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। উভয় ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, গ্রেফতারকৃতদের শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।