খুলনার জিআরপি থানার ওসি উছমান গনিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। ভিকটিম নিজেই বাদী হয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ আদালতে দাখিল করেন। ভিকটিমের পক্ষে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মানবাধিকার খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম অভিযোগ জমা দেন।

অ্যাডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ দায়ের করার পর বিচারক ভিকটিমকে ঘটনা নিয়ে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। শুনানি শেষে তিনি অভিযোগটি মামলা হিসেবে আমলে নেন এবং পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২ আগস্ট যশোর থেকে কমিউটার ট্রেনে খুলনায় আসার পথে রাতে ফুলতলা রেলস্টেশনে জিআরপি পুলিশ সদস্যদের হাতে মোবাইলফোন চুরির অভিযোগে আটক হন ওই গৃহবধূ। পরে ওই রাতে তাকে খুলনা জিআরপি থানা হাজতে রাখা হয়। পরদিন ৩ আগস্ট ৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখিয়ে মামলা দিয়ে আটক গৃহবধূকে খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

৪ আগস্ট আদালতে জামিন শুনানির জন্য তাকে হাজির করা হয়। এ সময় জিআরপি থানায় রাতভর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরেন ভিকটিম। তিনি দাবি করেন, ওসি উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

এরপর আদালতের নির্দেশে ৫ আগস্ট খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়।

ঘটনা তদন্তে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে। কমিটিতে সদস্যরা হলেন কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ. ম. কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম। এ কমিটি ৬ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু করে।

৭ আগস্ট ওসি উছমান গনি পাঠান ও এসআই নাজমুলকে ক্লোজড করে পাকশী নেওয়া হয়। ৮ আগস্ট পাকশী ও ঢাকা থেকে গঠিত পৃথক দুটি তদন্ত টিমের সদস্যরা আদালতের অনুমতি নিয়ে জেল গেটে ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর আদালতের নির্দেশে ৯ আগস্ট ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে জিআরপি থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্তকারী অফিসার হিসেবে ফিরোজ আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাকশী থেকে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত দিনের সময় দেওয়া হয়। ওই সাত দিন সময় শেষে ১৩ আগস্ট আরও ১৫ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করা হলে তা অনুমোদন হয়।

এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ আগস্ট আদালতে আবেদন করেন। আদালতে ১৯ আগস্ট শুনানি শেষে ১০ দিনের মধ্যে ভিকটিমকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি দেন। ১৫ আগস্ট তার মেডিক্যাল প্রতিবেদন আদালতে জমা হয়। ভিকটিমের আইনজীবী জানিয়েছেন, মেডিক্যাল প্রতিবেদনে তার মক্কেলের ওপর যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে। এরপরেই আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।