নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটসহ বিভিন্ন ইউনিট। ওই বাড়িটিতে নব্য জেএমবির সদস্যরা বোমা তৈরির ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করতেন বলে জানা গেছে।

তবে, সেখানে কেউ থাকতেন না। বাড়িটি থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, আইডি, বিস্ফোরক তৈরির উপাদান, খেলনা পিস্তল, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ৫০মিনিটে ফতুল্লার পিলকুনী তক্কারমাঠ এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জয়নাল আবেদিনের বাড়িটিতে অভিযানটি পরিচালিত হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি বাসায় অভিযানের পর সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া টয়গানের ( খেলনা অস্ত্র) সঙ্গে আইএসের একটি ভিডিওর তরুণদের হাতে থাকা টয়গানের অনেকটা মিল আছে। কয়েক মাস আগে আইএস এই ভিডিও প্রকাশ করে বলে জানান তিনি।

মনিরুল বলেন, গতকাল রোববার রাতে ঢাকা থেকে যন্ত্রকৌশলী জামালউদ্দিন রফিককে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর বক্তব্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের একটি বাড়ি থেকে তাঁর বড় ভাই আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক ফরিদউদ্দিন রুমিকে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে রুমির স্ত্রী ও বাবাকে আটক করা হয়েছে। তবে তাঁদের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত না। আর ছোট ভাই পলাতক আছেন।

মনিরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঢাকায় পুলিশের ওপর কয়েকটি হামলায় বোমার যেসব উপাদান ছিল সেসব উপাদান, টয়গান ও ভেস্ট নারায়ণগঞ্জের এই বাড়িতে পাওয়া গেছে। পুলিশ মনে করছে, তাঁরা আলাদা কোনো সংগঠনের এবং অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী। তাঁরা হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে আইএসের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয় যেখানে কয়েকজন তরুণের হাতে টয়গান ছিল। ওই টয়গানের সঙ্গে এ বাড়িতে পাওয়া টয়গানের অনেকটা মিল রয়েছে।

সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল বলেন, অভিযানে বাড়িটিতে বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়া গেছে, উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকদ্রব্য দিয়ে অন্তত ১৫ থেকে ২০টি বোমা (আইইডি) তৈরি করা যেতো।ঢাকা থেকে আরেকজনকে আটক করা হয়েছে ও তার পরিচয় নিশ্চিত নয় বলেও জানান তিনি।

অভিযান শুরুর সময় উপস্থিত পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, বাড়িটিতে প্রবেশ করার পর সেখানে শক্তিশালী কয়েকটি বোমা, বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, আইডি, বিস্ফোরক তৈরির উপাদান, খেলনা পিস্তল, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দেখা যায়। এখানে মূলত বোমা তৈরির ল্যাব হিসেবেই কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো।এর আগে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর চারটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। দুপুর ১২টা ৫৭ মিনিটে, ১টা ১০ মিনিটে, ১টা ২৪ মিনিটে ও ২টা ৯ মিনিটে সর্বশেষ বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজগুলো শোনা যায়। শেষ বিস্ফোরণের পর অভিযানস্থলে আগুন ধরে গেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।