গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে বৃহষ্পতিবার বিকেলে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় একঘন্টা অবরোধ করে রাখে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশসহ ৮জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল ছুড়েছে।

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয়রা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনার মুলাইদ রঙিলা বাজার এলাকাস্থিত ওয়েলটেক্স গ্রুপের আদিব ডাইং কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের পাওনা দু’মাসের (আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) বকেয়া বেতন ও ভাতাদি পরিশোধের দাবী জানিয়ে আসছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সকল পাওনাদি পরিশোধের কয়েক দফা আশ্বাস দিয়ে তারিখ ঘোষণা দিলেও তা প্রদান করেনি। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বৃহষ্পতিবার পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এদিনও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেলা আড়াইটার দিকে তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। এতেও কর্তৃপক্ষ সাড়া না দেওয়ায় শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে পাশর্^বর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের মহাসড়কের উপর থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের কন্সটেবল সুমনসহ অন্ততঃ ৮জন আহত হয়। আহত কয়েকজনকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একপর্যায়ে পুলিশ ১০ রাউন্ড টিয়ার সেল ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে ওই মহাসড়কে পুনঃরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

আহত পারুল, রাশিদা, রোকেয়া ও রুমাসহ শ্রমিকরা জানায়, শ্রমিকদের পাওনা ওভারটাইম ভাতা এবং বকেয়া আগস্ট মাসসহ চলতি মাসের বেতন ভাতা পরিশোধের তারিখ একাধিকবার নির্ধারণ করেও কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ বৃহষ্পতিবার পাওনাদি পরিশোধের নির্ধারিত তারিখেও কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করেনি। শ্রমিকরা বেতন ভাতা না পাওয়ায় তাদের ঘর ভাড়া ও দোকানের বাকী পরিশোধ করতে পারছে না। এতে শ্রমিকদের সঙ্গে দোকান ও বাড়ির মালিকরা অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। ফলে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছে।

শিল্প পুলিশের গিভেন্সী ক্যাম্পের ইন্সপেক্টর চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ কারখানায় ৬শতাধিক শ্রমিক রয়েছে।

এব্যাপারে শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শীঘ্রই শ্রমিকদের পাওনা বেতন ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে।