পৃথিবীর মধ্যে আইন অমান্যকারী দেশের শীর্ষে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে যারা আইন প্রয়োগ করবেন তাদের ভেতরে যদি দেখা যায়, আইন অমান্য করা ও আইন মানতে অনীহা প্রকাশ করতে, তবে সাধারণ মানুষ আইন মানবে কতটুকু এমন প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাই !

সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার না করে জনগণের প্রকৃত সেবক হয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি । কিন্তু তা অমান্য করে এবার রাজশাহী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলা ক্ষমতার দাপট দেখালেন ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে।

সরকারি মোতাবেক বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা আইনত দণ্ডনীয় হলেও সরকারের নির্দেশকে অমান্য করে নিজ স্বার্থ রক্ষা ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিট নিয়ে আইনের অপব্যহার করে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী বনলতা ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।

বিনা টিকিটের যাত্রীদের সতর্ক করে রেলের হুঁশিয়ারী, এমন অভিযান ক্রমাগত চলবে। তা সত্ত্বেও টিকিট না কাটা অসুখ সারবে কি? সংশয় থাকছেই।

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বনলতা ট্রেনে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিট কেঁটে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলার স্বামী সহ চারজন “ছ”বগিতে উঠেন। কর্তব্যরত টিটিই বাবু তাদের টিকিট চেক করার সময় তাঁদের বারবার অনুরোধ করেন প্রাপ্তবয়স্ক টিকিট কাঁটার জন্য। প্রাপ্তবয়স্ক টিকিট কাঁটতে বললে বাকবিতণ্ডার জেরে রেল কর্মকর্তা উপর হামলা চালায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলার স্বামী।

বৃহস্পতিবার (২৬শে সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা-রাজশাহীগামী বনলতা ট্রেনের ‘ছ’ বগিতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়,অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিট নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের ট্রেনে যাত্রা অবৈধ।কিন্তু ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেসে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলার স্বামী সহ চারজন আসছিলো মাঝপথে বনলতা ট্রেনে দায়িত্বরত টিটিই বাবু “ছ” বগিতে তাদের কাছে টিকিট দেখতে চাইলে তারা টিকিট দেখান দুইটি টি প্রাপ্তবয়স্ক ও দুইটি অপ্রাপ্তবয়স কিন্তু তারা চারজনই প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। টিটিই বাবু তাদের প্রাপ্তবয়স্ক টিকিট কাটতে বললে ম্যাজিস্ট্রেট শিলার স্বামী জোর গলায় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বলেন আমাকে চিনিস তুই তোর চাকরি খেয়ে দেবো তোর মত হাজারটা টিটিই আমার পকটে থাকে আর তুই আমার কাছে টিকিট চাস তোরে লাল সিকের ভাত খাওয়াবো সহ কর্তব্যরত ট্রেন কর্মকর্তাদের শ্লীলতাহানি করেন ও তাদের মারতে উঠেন।

এ নিয়ে রেলওয়ের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং রেলওয়ে থানায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলা বলেন, কার কাছে টিকিট চাস তোর কলিজা কতবড় জানিস না আমি কে আমি ম্যাজিস্ট্রেট ইচ্ছা করলে তোর চাকরি খেয়ে দিবো দুইটাকার চাকরি করিস আর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে টিকিট চাস ।

এ বিষয়ে ঢাকা-রাজশাহীগামী বনলতা ট্রেনে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান,জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলার স্বামী একজন ডাক্তার হয়েও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে যা একজন উচ্চশিক্ষিতর ভাষা নয়। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিট নিয়ে অবৈধভাবে যাত্রা করছিলেন এসময় কর্তব্যরত টিটিই বাবু বারবার অনুরোধ করেন প্রাপ্তবয়স্ক টিকিট কেটে নির্ধারিত বগিতে ভ্রমণ করতে। তখন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলার স্বামী প্রাপ্তবয়স্ক টিকিট কাঁটতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ‘ছ’ বগিতে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী ও টিটিই বাবুর উপর হামলা চালায়। অথচ এখন মিথ্যাচার করা হচ্ছে যে টিটই বাবুই নাকি তাদের উপর আক্রমণ করেছে। আসলে মিথ্যার আড়ালে সত্য ঘটনাকে লুকাতে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলা ।

দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে আইন প্রণীত হয়। কিন্তু সেই আইনের যদি প্রয়োগ না হয় তাহলে আইন প্রণয়ন করে লাভ কি?

“সমাজ কি বলে যখন দেখে একজন উচ্চশিক্ষিত ম্যাজিস্ট্রেট প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিটে অবৈধ ভাবে ভ্রমণ করেও টিটিই কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ? এ লজ্জা কার? ”

এ বিষয়ে টিটিই বাবুর কাছে জানতে চাইলে বলেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম কিন্তু আমার দায়িত্ব পালনে অবৈধভাবে বাধা দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিলার স্বামী । তাকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি প্রাপ্তবয়স্ক টিকিট কাটতে রাজি হননি।

তিনি আরো বলেন, “একটি সভ্য সমাজে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক টিকিটে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রণীত আইন অমান্য করে একজন ম্যাজিস্ট্রেট অবৈধভাবে যাত্রা করতে পারেন না।

নিজেদের স্বীয় স্বার্থ ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য আইনটির অপব্যহার করা হচ্ছে, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই ঘটনাটি।”

এ বিষয়ে রেলওয়ে ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন উচ্চশিক্ষিতর কাছে এমন ভাষা শোভনীয় নয়। ছোট ছোট বালুকণা মিলেই কিন্তু বিশাল মরুভূমির সৃষ্টি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি মিলেই সৃষ্টি মহাসাগর। আইন না মানার উল্লেখিত বিষয়গুলো হতে পারে ছোট বিষয়। কিন্তু আমরা বলবো, আসলে ছোট বিষয় নয়। কারণ ছোট বিষয় হলে আইন প্রণয়ন হতো না। ছোট হোক বড় হোক জনস্বার্থে বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়া একান্ত জরুরি। আইন অমান্য করে আমরা কোনোক্রমেই নিজেদেরকে সভ্য জাতি দাবি করতে পারিনা।

তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করবো জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ হোক।আমরা আইন মান্যকারী সভ্য জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।

আহাফুজুর রহমান আরিফ