কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, ছাত্র রাজনীতি এটা মানুষের মৌলিক অধিকার, মানুষের কথা বলার অধিকার। স্বাধীনভাবে কোন কথা বললে সেটা সে বলতেই পারে। একজন মানুষ ১৮ বছর বয়স হলে কথা বলার অধিকার পায়। এটা মানুষের ফ্রিডম অব স্পিচ। তবে সংবিধান মেনে যে কেউ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনি আইন করে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে পারবেন না। তবে ছাত্ররাজনীতি হতে হবে স্বচ্ছ, সুন্দর এবং নৈতিক ও সত্যিকার অর্থের গণতান্ত্রিক পরিবেশে।

মন্ত্রী আরো বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র রাজনীতি রয়েছে। এমন কি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র রাজনীতি আছে। সেখানেও দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হয়। ছাত্ররাজনীতি আগেও ছিল এবং থাকবে। সেখানে কোনক্রমেই কোন পেশী শক্তির ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে আমরা না, এটা মানুষের মৌলিক অধিকার। ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে যাতে সরকারের প্রচলিত যে আইন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, পাশাপাশি বিশ^বিদ্যালয় আছে- তাদের মূল্যবোধের যাতে অবক্ষয় না হয় সেদিকটি লক্ষ্য রাখতে হবে। ছাত্রদের ছাত্ররাজনীতি করতে হবে ন্বচ্ছ, সুন্দর, নৈতিক এবং গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার মধ্যে।

শনিবার সকালে গাজীপুরস্থ বালাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন কর্মশালা-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা প্রসঙ্গে বলেন, এটা একটি মর্মান্তিক ও দুঃখজনক ঘটনা। আমার ব্যক্তিগতভাবে রক্তক্ষরণ হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা এই ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হতে পারে, এরকম দুষ্কর্মের মধ্যে যেতে পারে, একটা মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করতে পারে এটা আমরা চিন্তাও করতে পারিনা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী এব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণে এ ধরণের ঘটনা যাতে দ্বিতীয়বার না ঘটে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশণা দিয়েছেন। যারা এধরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠাণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী বলেন, কৃষিকে লাভজনক এবং এর বহুমুখীকরণ করতে হবে। আমাদের শুধু ধানের উপর নির্ভরশীল হলে হবে না। অন্যান্য ফসল, ফলমূল, সবজি, এগুলো আমাদের করতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল- দানাদার খাদ্যে আমরা স্বয়ং সম্পন্ন হবো। আমরা তাতে সফল হয়েছি। ধানসহ দানাদার জাতীয় খাদ্য এখন আমাদের উদ্বৃত্ত হচ্ছে। কিন্তু এতে আমাদের আত্মতৃপ্তি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো- কৃষিতে আমাদের পুষ্টিজাতীয় নিরাপদ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। ধান বা বিভিন্ন ফসল শুধু বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করলে হবে না। এটাকে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করতে হবে। ফলমূল, শাক-সবজির মতো উচ্চমূল্যের ফসল আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এটাকে রপ্তানি করতে পারে না। কারণ আমাদের এক্রিডেটেড ল্যাব নেই। তাই বিদেশী ক্রেতারা মনে করেন এগুলো নিরাপদ না। বিভিন্ন দেশকে বোঝাতে হবে আমাদের এখান থেকে যেসব পণ্য রপ্তানি হবে সেগুলো নিরাপদ। তাই বারি’তে আমরা আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব করার চেষ্টা করছি। তিনি অর্থকরী এবং লাভজনক ফসলের দিকে কৃষি বিজ্ঞানীদের আরও দৃষ্টি দেওয়ার আহবান জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জাত উদ্ভাবন করেছে। এটা চাষ করে একজন চাষী এক বিঘা জমিতে মাত্র ১৮ দিনে ১ লাখ টাকা লাভ করেছে। তাই আমি বলবো যারা চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, মাদক পাচার করে, ক্যাসিনো ব্যবসা করে তারা এসব ছেড়ে যদি এই টমেটো চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করে তাহলে ক্যাসিনোর চেয়ে বেশি টাকা আয় করতে পারবে

এর আগে মন্ত্রী বারি’র উদ্ভাবিত বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি ও পণ্যের প্রদর্শনী স্টল এবং বিভিন্ন গবেষণাগার পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কৃষি গবেষণার মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ,কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান,গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. আবুল কালম আযাদের সভাপতিত্বে কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, বারি’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা প্রমূখ। এতে বারি’র গবেষণা কার্যক্রম সাফল্য ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনার উপর উপস্থপনা করেন পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. আব্দুল ওহাব এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ)ড. বাবু লাল নাগ।

কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বারি’র অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালকবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বারি’র স্টেকহোল্ডার তথা পলিসিমেকার, জনপ্রতিনিধি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নার্সভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিএডিসি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও কৃষিসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বারি’র বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

আয়োজকরা জানান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ২১২টি ফসলের ৫৫৮ টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ), রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৫২৪ টি অন্যান্য প্রযুক্তিসহ (২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত) মোট ১,০৮২টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে এবং বর্তমানে ২০৭টি ফসলের উপর গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, গম, সবজি, মসলা এবং ফল ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই বাছাই ও দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কর্মসূিচ গ্রহণ করাই এ কর্মশালার প্রধান উদ্দেশ্য।