বাগদি একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশে এদের বাস। তবে এদেশে বসবাসবাসী বাগদীদের নিজস্ব জমি বা বসত ভিটা নেই। এদেরকে বুনো বা বাগদি সম্প্রদায় বলা হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে দেখা যায় এ সম্প্রদায়ের মানুষদের। সমাজে অচ্ছুত বলে পরিচিত এ সম্প্রয়ের মানুষ মাছ-কাঁকড়া-কুইচ্যা-কচ্ছপ-খরগোশ শিকার করে, ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান কুড়িয়ে চলে তাদের জীবন। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে চরম অস্তিত্ব সংকটে এ অবহেলিত সম্প্রদায়। অস্তিত্ব সংকট নিয়েও এলাকাতেই এখনও কিছু বাগদী জনপদ টিকে আছে। সরোজমিনে কথা হয় ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তৈলকূপী গ্রামের বাগদি সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে। ঐতিহাসিকভাবেই বাগদী জাঁতি জলাভূমি প্রতিবেশ এলাকায় বসতি গড়ে তুলেছিল। বিল, বাওড়, নদীর কিনার, নালা ও খালের ধারেই জলাভূমি থেকে কুড়িয়ে পাওয়া সহায় সম্পদে গড়ে ওঠা সেই দু:সাহসী স্বনির্ভর বাগদী আখ্যান এখন আর নেই। জীবন ধারণের জন্য নদি, বিল-হাওড়ে বা কৃষি খামারে নামতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। বিল-বাওড় নদীর ইজারাদার কিংবা খামারের মালিকের হাতে অনেক সময় হতে হয় শারীরিকভাবে নির্যাতিত। এককালে বাগদীরাও নিজস্ব সর্বপ্রাণবাদী ধর্ম পালন করতেন কিন্তু বাঙালি হিন্দু সমাজের সাথে বসবাসের ফলে তারাও নিজস্ব ধর্ম থেকে বাধ্য হয়েছেন সনাতন হিন্দুধর্মে আত্তীকরণের। বাঙালি হিন্দু সমাজের কঠোর বর্ণপ্রথা বাগদীদের অচ্ছুত ও নিচুজাত বানিয়ে রেখেছে এখনও। এখনও বাগদীদের সাথে কথিত বর্ণহিন্দুর জলচল নেই। বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষকে সাধারণত অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা বুনো নামে চিহ্নিত করে থাকে। তবে বাগদীদের ‘বুনো’ বলাটা বাগদীরা মোটেও সহ্য করতে পারেন না। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার চাপে হারিয়ে গেলে ভাগদিদের নিজস্ব সংস্কৃতি। মূলত: বাগদী ভাষার চর্চা এখন এক প্রবীণজন ছাড়া নতুন প্রজন্মের ভেতর নেই বললেই চলে। উৎসবের আমেজ মূলত: হেমন্ত ও শীতকালে। আমন ধান কাটার পরই বাগদী সমাজও আপন জাতিগত আচাররীতিতে টানটান হয়ে ওঠে। বাঙালি কৃষকরা মূলত: অগ্রহায়ন থেকে পৌষের প্রথম দিকে বিল এলাকার আমন ধান কেটে ঘরে তুলেন। আমন মওসুমে বিল এলাকার দেশী আমন ধানের শীষ কেটে কেটে ইঁদুরেরা গর্তে নিয়ে যায়। আর তখন বাগদিরা ইন্দুরগাতি উৎসব পালন করে থাকে। কারণ এই ইঁদুরের গর্ত থেকে তারা ধান সংগ্রহ করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাগদি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উৎসবে অনেকখানি ভাঁটা পড়েছে। সমাজের মূল ধারার বাইরে থাকায় এ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার ভোগ করতেই এদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ বাগদিরা কোনো ধরনের সরকারি সাহায্য ভোগ করতে পারে না। এমনকি তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়েও ভর্তির সুযোগ তেমনভাবে পাননা। চিকিৎসা বঞ্চিত বাগদি সম্প্রদায়ের কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা চলে শুধুমাত্র নিজস্ব পদ্ধতির ঝাড়ফুঁকে। নোংরা বাস অযোগ্য পরিবেশে তাদের বসবাস। রান্নাবান্নাও চলে এখানে। বাল্য বিবাহ তাদের অন্যতম ঐতিহ্য। অপুষ্ট শিশুগুলোর দুরন্ত দৌড়ঝাঁপ আসলে বুঝতে দেয় না তাদের জীবন করুণ দিকটিকে। এখানকার বয়স্কদের টিকে থাকার বিষয়টি আরও বেদনাদায়ক। এতোকিছুর পরও তাদেরকে ঘিরে নেই কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা।পর্যাপ্ত না হলেও বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন থেকে তাদের উন্নয়নে নেয়া হচ্ছে কিছুকিছু উদ্যোগ। উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও। এখনই সময় সঠিক উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়ার। তৈরি করতে হবে বাগদিদের নিজের মতো করে বাঁচার পরিবেশ। তাহলেই বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে বাগদি নামের একটি দেশের ক্ষুদ্র একটি নৃ-গোষ্ঠী। এ ব্যাপারে কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলার তৈলকূপী গ্রামের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমানের সাথে তিনি জানান, আমাদের গ্রামে আগে অনেক বাগদি সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। কালের বিবর্তনে তারা অনেকেই জীবন জীবিকার তাগিতে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে গিয়াছে। এখন এই গ্রামে ১৫/১৬ টি বাগদি সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। আমরা সেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি তারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও হিন্দুরাদের কাছে তাদের মূল্যায়ন সেইভাবে আসেনি। বাগদি সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজাপার্বন সবই হিন্দুদের নিয়ম নীতিতেই করতে দেখে আসছি। আগে তারা সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা না পেলেও এখন কিছু কিছু সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে যেমন, প্রতিবন্ধি ভাতা, বসষ্কভাতা, গর্ভবতি ভাতা ইত্যাদি। তবে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্টির দিকে সরকারী আরো সুযোগ সুবিধা পেলে তারা অস্তিত্ব সংকট থেকে মুক্তি পাবে।
চরম অস্তিত্ব সংকটে ও অবহেলিত ‘বাগদি’ সম্প্রদায় এখন বিলুপ্তির পথে
সাম্প্রতিক
বার্তা-মঞ্চ
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও রূপকল্প ২০৪১
আমাদের জানা আছে যে আদি যুগে পৃথিবীতে মানুষ শুধু কৃষি বা প্রকৃতির উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করতো। ৩০০ বছর আগেও অর্থনীতি ও মানুষের...
বিনামূল্যে ইন্টারনেট দিচ্ছে বাংলালিংক
দেশের অন্যতম উদ্ভাবনী ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক সর্বস্তরের মানুষের ডিজিটাল জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত করার লক্ষ্যে ফোর-জি ও ফাইভ-জি স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।...
রিয়েলমি সি৬৭ স্মার্টফোন কিনে ১ লাখ টাকা পুরস্কার জিতলেন রিয়েলমি গ্রাহক
প্রি-বুক রিয়েলমি সি৬৭ ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়া ভাগ্যবান একজন বিজয়ীকে এক লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করেছে তরুণদের জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি। রিয়েলমি স্মার্টফোন কিনে একটি আকর্ষণীয়...
রোজায় সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ইফতার আয়োজনে রিয়েলমি
পবিত্র রমজান মাসে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঙ্গে ইফতার ভাগাভাগি করার অনন্য এক উদ্যোগ নিয়েছে তরুণদের জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘টুগেদার ফর বাংলাদেশ’- এর...
ব্র্যাককে ডিজিটাল সেবা দিবে বাংলালিংক
দেশের শীর্ষস্থানীয় উদ্ভাবনী ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি সংস্থা, ব্র্যাক এর ভেতর একটি হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ব্র্যাক-এর কর্মীরা বাংলালিংক-এর বিভিন্ন...