ছাত্রলীগের পিটুনিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বি নিহত হওয়ার ঘটনায় চলমান মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনে আপাতত ইতি টানলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। এর আগে বেলা ১১টা থেকে ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষার্থীরা বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।

এর আগে গতকাল সোমবার আবরার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য রোববার ও সোমবার আন্দোলন শিথিল ছিল। এরই মধ্যে গণভবনে আবরারের বাবা মা ও ছোট ভাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে, তাহলে আন্দোলন কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা জানান, মেনে নেওয়ার ঘোষণা আর বাস্তবায়ন এক নয়, কেবল আশ্বাস নয়, বাস্তবায়নও দেখতে চাই।

এ ব্যাপারে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‌‘শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে আমরা কাজ করছি। আবরার হত্যার প্রতিবাদে চলমান আন্দোলন ভর্তি পরীক্ষায় প্রভাব ফেলেনি। বুয়েটের সংকট নিরসনে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। আশা করি, দ্রুতই সংকট নিরসন হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ ব্যাচ) ছাত্র ফাহাদকে মারধর করে হত্যা করা হয়। পরে ৭ অক্টোবর হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে।

এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আবরার হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ ছাত্র গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন চারজন।

তারা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ, মেফতাহুল ইসলাম ও মুজাহিদুর রহমান। আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, কীভাবে কতজন মিলে নির্যাতন করে সেদিন আবরারকে তারা হত্যা করেন। জবানবন্দিতে জানা গেছে, আবরারকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প ও মোটা দড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ, মেহেদি হাসান রবিনসহ অন্যরা।

এজাহারে নাম না থাকায় না আলোচনা সমালোচনার পর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড দেয়। এদিকে গতকাল সোমবার তাকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।