বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার গ্রেফতারকৃত ১৯ আসামীর সবাই এখন গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। গ্রেফতারের পর বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে এ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান জানান, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার গ্রেফতারকৃত ১৯ আসামীর সবাইকে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ কারাগার থেকে পর্যায়ক্রমে গাজীপুরের এ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার অমিত সাহাসহ তিনজনকে ঢাকার ওই কারাগার থেকে এ কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

জানা গেছে, বুয়েটের ইইই (ইলেক্ট্রিক এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২)। তিনি বুয়েটের শেরেবাংলা আবাসিক হলের নিচ তলার ১০১১ নম্বর রুমে থাকতেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালির কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে। ৬ অক্টোবর বুয়েট’র কয়েক জন ছাত্র গত শিক্ষার্থী আবরারকে তার শেরেবাংলা হলের রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরদিন ৭ অক্টোবর রাত আড়াইটা পর্যন্ত ওই হলের ২০১১ ও ২০০৫ নম্বর রুমের ভিতর নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও লাঠি-সোটা দিয়ে আবরারের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আবরার। তার মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে আবরারের লাশ ফেলে রাখে। পরবর্তীতে কিছু ছাত্র সেখান থেকে আবরারকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তকালে চিকিৎসক নিহতের দেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ। মামলায় অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করা হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী এ মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ১৩ নবেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (বুয়েটের সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতাসিম ফুয়াদ (সিই বিভাগ, ১৪তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান রবিন (সিই বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), মো. অনিক সরকার, (সিই বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ১৬তম ব্যাচ), মো. মনিরুজ্জামান মনির (পানিসম্পদ বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, ১৫তম ব্যাচ), মো. মাজেদুল ইসলাম (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. মোজাহিদুল রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), খোন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর (এমই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মো. আকাশ (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), মো. শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, ১৭তম ব্যাচ), মো. শাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. তানীম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. মোর্শেদ (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মো. মোয়াজ (সিএসই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ) ও মুনতাসির আল জেমিসহ (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ)। এরা সবাই বুয়েট’র একই ছাত্রবাসের ছাত্র।

এদিকে পুলিশ এ ঘটনায় বিশ^বিদ্যালয় থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হত্যাকারীদের সনাক্ত ও অমিত সাহা ১৯জনকে সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্নস্থান হতে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে কয়েকজন আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ কারাগারে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে তাদের সবাইকে ওই কারাগার থেকে সোমবার পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন এ কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান। অপরদিকে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবরার হত্যার ঘটনায় জড়িত ১৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।