গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তরা মসজিদের প্রতিটি তলার কয়েকটি গেইটের তালা কেটে ভিতরে ঢুকে সিসিটিভি’র সিডিসহ বিভিন্ন ইলেক্টনিক্স সামগ্রী ও মালামাল নিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং জিএমপি’র সদর থানা থেকে মাত্র কয়েকগজ ব্যবধানের এ মসজিদে চুরির ঘটনায় মুসল্লিরাসহ স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি গাজীপুর মহানগর এলাকায় ছিনতাই ও চুরির ঘটনা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও জয়দেবপুর বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, মসজিদ কমিটির হিসাব রক্ষক মোঃ মোশারফ হোসেন ও সদস্য মাসুদ জানান, গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্র জয়দেবপুর বাজার এলাকায় দোতলা বিশিষ্ট এ মসজিদে বৃহষ্পতিবার রাতে দুর্বৃত্তরা হানা দেয়। তারা মসজিদের উত্তরের ও ভিতরের কলাপসিবল গেইটের তালা কেটে ভিতরে ঢুকে প্রতিটি তলাতেই প্রবেশ করে। দুর্বৃত্তরা মসজিদের অফিস রুমে রক্ষিত মসজিদের সিসিটিভির ডিভিআর ভেঙ্গে হার্টডিক্স ও সিডি এবং মাইকের এমপ্লিফায়ারসহ বিভিন্ন ইলেক্্রনিক্স সামগ্রী নিয়ে যায়। এছাড়াও নীচতলার মেহরাবে থাকা অটোবির একটি আলমারীসহ দ্বিতীয় তলার কয়েকটি আলমারী ভেঙ্গে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায় এবং কাগজপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল তছনছ করে। ফজরের নামাজের সময় খাদেম আমীর হামযা মসজিদে এসে চুরির ঘটনা দেখতে খতিব ও মোয়াজ্জিনসহ অন্যদের জানান।

মুসল্লীসহ স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্র জয়দেবপুর বাজার এলাকার এ মসজিদের মাত্র কয়েকগজের ব্যবধানে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং জিএমপি’র সদর থানাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠাণ রয়েছে। মসজিদ ও বাজার কমিটির পৃথক উদ্যোগে ওই এলাকায় পাহাড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পুলিশের একাধিক টহল টিম। এসসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে গাজীপুর কেন্দ্রীয় মসজিদে চুরির ঘটনায় মুসল্লিারাসহ স্থানীয়রা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা এ ব্যপারে মসজিদ কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জিএমপি’র সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মিজানুর রহমান এব্যাপারে জানান, কেন্দ্রীয় মসজিদে চুরির ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করে নি। তবে মৌখিকভাবে চুরির সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে। এঘটনায় জড়িতদের শীঘ্রই গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন সরকার ও এলাকাবাসি জানায়, সম্প্রতি গাজীপুর মহানগর এলাকায় আশংকাজনক হারে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। চোরের উপদ্রপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গাজীপুর মহানগরবাসী। চোরের উপদ্রপে নগরবাসীর মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ী কাকুল হাসানের বাড়িসহ মহানগরের নীলের পাড়া এলাকার অন্ততঃ ১০ বাড়িতে দুসপ্তহে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব বাড়ির দড়জা, জানালা ভেঙ্গে কৌশলে ঘরে প্রবেশ করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, টিভি, মোবাইলসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বাড়ি ও ডেইরী ফার্ম থেকে গরু চুরি হয়েছে।

জাপান টোবাকো’র মালিক ব্যবসায়ী নূরুল হক রতনসহ স্থানীয়রা জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার অফিস থেকে ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা নিয়ে রতন ও তার ছয় কর্মচারী পূবালী ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর (চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার শালবন হোটেলের সামনে) হঠাৎ ৫/৬জন ছিনতাইকারী দু’টি মোটর সাইকেল যোগে এসে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও মারধর করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এতে ব্যবসায়ী রতনসহ দু’জন আহত হন। পুলিশ এপর্যন্ত ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার বা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। এ ঘটনার কিছুদিন আগে ভোগড়া বাসন সড়ক এলাকায় স্থানীয় ওয়াসিফ নিট কম্পোজিট কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়াও বিভিন্নস্থানে প্রায়শঃ চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আ্যাড.আয়েশা আক্তার জানান, গত কয়েকদিন আগে ২৯ নং ওয়ার্ডের কৃষিগেইট ফাইজুলের মার্কেট এলাকার একটি ডেইরী ফার্ম থেকে ১০টি গরু নিয়ে যায় চোরেরা। এছাড়াও তড়ৎপাড়া এলাকার ওসমান ও রশিদ মাতাব্বরের বাড়িতেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। তিনি জানান, এসকল ঘটনার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অভিকাংশ ভুক্তভোগীরা পুলিশের নানা হয়রানীর ভয়ে থানায় জিডি বা অভিযোগ করছেন না। অনেকে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন। এমনকি জেলা আইনশৃঙ্খলার সভায় চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো উত্থাপন করা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য তেমন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।