ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শুধু শিবির সন্দেহে নয়, নানা কারণেই হত্যা করা হয়েছে। (আবরার) শিবির করেন কি না, হত্যার পেছনে এটি একটি মাত্র (অন্যতম) কারণ। কিন্তু যাঁরা তাঁকে হত্যা করেছেন, তাঁরা এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কেউ তাঁদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে, সালাম না দিলে, তাঁদের সামনে হেসে দিলে ইত্যাদি কারণে তাঁরা নির্যাতন করতেন।  বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। আবরার হত্যার চার্জশিট বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্তরা র‍্যাগিংয়ের নামে নতুনদের আতঙ্কিত রাখতে এসব কাজ করেন। এসব বিষয়ে আমরা আগে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে তদন্তে একজন সাক্ষী বলেছেন যে তিনি একজনকে সালাম দেননি বলে তাঁকে পেটানো হয়েছে। র‍্যাগিংয়ের নামে উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের অভ্যস্ততার অংশ হিসেবেই আবরার হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগে থেকে মনিটরিং করলে এমন ঘটনা না–ও ঘটতে পারত। এটা তাদেরই মনিটর করার কথা।

শিবির সন্দেহ শুধু একক কারণ নয়, নানা কারণে তারা তার (আবরার) আচরণে, সালাম না দেওয়া এসব মিলিয়ে আগে থেকেই একটা ক্ষোভ ছিল। এবং অন্যদেরকেও কথিত শিক্ষা দেওয়ার নামে র‌্যাগিংয়ের নামে আসলে তাই হচ্ছিল অর্থাৎ ঝিকে মেরে বৌকে শেখানোর মতো আরকি। একজনের ওপর নির্যাতন করে বাকিরা যাতে তাদের যথাযথভাবে সালাম দেয়, তাদের ভয় করে চলে-এ রকম একটা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতেই যে দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া সেটির অংশ হিসেবে এর ধাবরাবাহিকতায় উচ্ছৃঙ্খল ছেলেগুলো এই কাজ করেছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি রাত ১০টার পর থেকে আবরারের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ২টা ৫০–এর দিকে ডাক্তার তাঁকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে পেটানো হচ্ছিল।’

পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যায় যারা রড দিয়ে পিটিয়েছিল তাদের ফাঁসি হয়েছে। অভিযুক্ত কয়েকজন আবার খালাসও পেয়েছে। সেই মামলায় আমরা তেমনভাবে সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণের জন্য ট্রেডিশনাল তদন্ত বা চাক্ষুষ সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। আবরার হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তদন্ত সহায়ক দল ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের তথ্য রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ, পাশাপাশি ৮ জন আসামির বক্তব্যও হত্যাকাণ্ডের অনেক বিষয় প্রমাণ করে, যদিও এ ধরনের ঘটনায় চাক্ষুষ সাক্ষী থাকলেও সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসে না। কিন্তু আমরা যেভাবে চার্জশিট প্রস্তুত করেছি আশা করছি সবার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে। মনিরুল ইসলাম বলেন, আবরারকে হয়তো একটু আগে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এমন নৃশংস পরিণতি হতো না।