কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে (এলডিপি) ভাঙন ধরেছে। একই নামে আরেকটি দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। এলডিপির এই অংশের সাত সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আব্দুল করিম আব্বাসীকে আহ্বায়ক এবং শাহাদাত হোসেন সেলিমকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন শাহাদাত হোসেন সেলিম। আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা হলেন আব্দুল গণি, এম আবুল বাসার, সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, তৌহিদুল আনোয়ার ও কাজী মতিউর রহমান।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৯ নভেম্বর রাতে এলডিপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে অলি আহমদ সভাপতি ও রেদোয়ান আহমেদ মহাসচিব হিসেবে পুনর্র্নিবাচিত হয়েছেন। নতুন কমিটিতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, তৌহিদুল আনোয়ার বাদ পড়েন। এর আগে অলির নেতৃত্বাধীন কমিটি থেকে বেরিয়ে আসেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল গণি, সাংগঠনিক সম্পাদক এম আবুল বাসার ও দফতর সম্পাদক কাজী মতিউর রহমান। এছাড়া, গত ২৬ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন আবদুল করিম আব্বাসী।

সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, সম্প্রতি সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিকভাবে দলের নির্বাহী কমিটি থেকে আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম।

এলডিপি ভেঙে নতুন এলডিপি গঠন প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, অলির অতি জামায়াত-নির্ভরতা ও জামায়াত-প্রীতির কারণে তার সঙ্গে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। এছাড়া, আমরা যেখানে ২০ দলীয় জোটে আছি, সেখানে কয়েকটি দল নিয়ে অলি আহমদের আলাদা জোট মুক্তমঞ্চ’ করার কোনও যুক্তি ছিল না। সেই কারণে তার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এর ফল হিসেবে নতুন এলডিপি গঠন। এলডিপি থেকে অলি আহমদসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, আমরা আর অলি আহমদের সঙ্গে রাজনীতি করবো না। বিএনপি ছেড়ে এসে অলি আহমদের সঙ্গে এলডিপি করাটা আমার মহাপাপ ছিল।আরেক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, আমরা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আছি। আশা করি বিএনপি আমাদের সমর্থন দেবে।

কর্নেল অলি আহমদের সঙ্গে কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ রাজনীতি করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন আবদুল করিম আব্বাসী।তিনি বলেন, কর্নেল অলি নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। সব কিছুতেই তিনি নিজের স্বার্থ দেখেন। তিনি বলেন, আজ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতির পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলতেও আমার লজ্জা হয়। শুধু এক কথায় বলব, দেশের পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। আমার ৮৪ বছর বয়স হয়েছে, বাঁচার আর সাধ নেই। অনেক দেখেছি, বুঝেছি। এখন দেশেই স্বাভাবিক মৃত্যু চাই। এটাই আমার জীবনের শেষ চাওয়া। দেশবাসীকে আমি অনুরোধ করছি, যার যার অবস্থান থেকে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে অবদান রাখুন।

করিম আব্বাসী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছাত্রলীগ করেছি। রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক দুঃখকষ্ট স্বীকার করেছি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করি। আমি ২৪ বছর নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলাম। জাতীয় সংসদে পাঁচবার নির্বাচন করেছি, তিনবার হুইপ ছিলাম। আমার এলাকার মানুষ, এই দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে।তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হতো তাহলে ফলাফল কী দাঁড়াতো তা আমরা সবাই জানি। কেউ সত্যি কথা বলতে চায় না, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের কলম স্তব্ধ হয়ে গেছে। তারপরও বলব, জাতির প্রয়োজনে সবার এগিয়ে আসা উচিত। সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে এলডিপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন অলি আহমদ। আজ (১৮ নভেম্বর) বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।