আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, বিএনপি’র কাছে আজ আর কোন ইস্যু নেই। বিএনপি’র এখন বেলা শেষ। শেষ বেলায় বিএনপি নেতারা এখন ইস্যু খুঁজে বেড়াচ্ছে। তারা একটার পর একটা ইস্যু খুঁজছে। কিন্তু বিনপি’র হাতে আমরা কোন ইস্যু তুলে দেব না। শেখ হাসিনা ঘরের লোকদের বিরুদ্ধেও একশন নিচ্ছেন। কাজেই তাদের কাছে আমরা কোন ইস্যু তুলে দেব না।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপি চুক্তি আর সমঝোতা স্মারকের পার্থক্যটা বুঝে না। ভারতের সঙ্গে এবার কোন চুক্তি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এবার ভারতে যেটা করেছেন, সেটা হলো এমওইউ অর্থাৎ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। অথচ তারা চুক্তি নিয়ে চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীকে। চুক্তি আর সমঝোতা স্মারক এক নয়। তারা সেটা বুঝে না।

তিনি বলেন, সড়ক যে আইন হয়েছে আমি পরিবহণ মালিক শ্রমিক ও তাদের এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ জানাবো আপনারা আইনটি মেনে চলুন। জনগণ ও পরিবহন মালিক শ্রমিক সকলের স্বার্থে আজ সড়কে শৃঙ্খলা দরকার। আইন করা হয়েছে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য, কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়। এ আইন কারো ক্ষতি করবে না। এ আইন জনস্বার্থে করা হয়েছে। আইনের প্রয়োগে বাড়াবাড়ি হবে না। তাই পরিবহণ মালিক শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ রইল, আপনারা ধর্মঘট করে মানুষকে কষ্ট দিবেন না। আপনারা আইন মেনে চলুন।

তিনি মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে গাজীপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভেকেট আকম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং গাজীপুর সিটি মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি, উপ-প্রচার সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আখতারউজ্জামান, ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, সামসুন্নাহার এমপি প্রমুখ।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপি ভারত নিয়ে কথা বলে। তারা এতোটা ভারত বিরোধী কেন আমরা তা জানি। বিএনপি ভারতের আনুগত্যের জন্য বার বার ভিক্ষা চেয়েছে। তারা ব্যার্থ হয়ে এখন আওয়ামীলীগকে ভারতের সঙ্গে জড়িয়ে পুরনো সেই সুরে নতুন খেলা শুরু করেছেন। ভারত আমাদের বন্ধু, আমরা ভারতের প্রতি আনুগত্য দেই না। আমরা বন্ধুত্ব করেছি, আমরা ভারতের আনুগত্য চাই না। আমাদের শক্তির উৎস আমাদের দেশের জনগণ, কোন বিদেশী শক্তি আমাদেরকে ক্ষমতায় বসাবে না। বিএনপি ক্ষমতার জন্য আজ বিদেশীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আওয়ামীলীগ ক্ষমতার জন্য জনগণের কাছে দাবী জানাবে, ভোট চাইবে, কিন্তু কোন বিদেশীর কাছে যাবে না।

তিনি আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আপনাদের একটি বিষয়ে অনুরোধ করছি, আপনারা আওয়ামীলীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখুন। তৃণমূলে আপনাদের এক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আপনারা কমিটি গঠণ করতে গিয়ে পকেট কমিটি করবেন না। কমিটি গঠণ করতে গিয়ে দুঃসময়ে ত্যাগীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা ক্লিণ ইমেজের অনুপ্রবেশকারী লোককে আওয়ামীলীগ অবশ্যই স্বাগত জানাবে, কিন্তু দুষিত লোককে আমাদের দরকার নেই। সারা বাংলায় আওয়ামীলীগে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। তিনি নেতা কর্মীদেরকে মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগ সুবিধাবাদীদের দল নয়। আওয়ামীলীগ আদর্শবাদীদের দল। আদর্শের শিকড় থেকে বিচ্যুত হলে আওয়ামীলীগ বাঁচবে না। আওয়ামীলীগ বাঁচবে যতোদিন আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আঁকড়ে ধরে রাখবো, আমরা আদর্শের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবো। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে হবে। দল ভারী করার জন্য খারাপ লোকদের পকেটে আনবেন না। মনে রাখতে হবে, এ খারাপ লোকেরা বসন্তের কোকিল। ক্ষমতা থাকলে এরা আসবে, আর ক্ষমতা চলে গেলে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মন্ত্রী বলেন, পিঁয়াজের মূল্য এখন নিয়ন্ত্রণে এসে যাচ্ছে। পিঁয়াজের মূল্য কমে যাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ কয়েকদিনের মধ্যে পিঁয়াজের মূল্য স্বাভাবিক হবে। লবন নিয়ে অনেকেই কারসাজি শুরু করেছে। সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি।

তিনি হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, দেশে এখন আর টেন্ডারবাজী চলবে না, দুর্নীতি চলবেনা, মাদক ব্যবসা চলবে না, জমি দখল চলবে না। যারা এসব কর্মকান্ডে জড়িত তারা হুশিয়ার হয়ে যান, শেখ হাসিনার একশন শুরু হয়ে গেছে। দুর্বত্তায়নের চক্র ও দুর্নীতির চক্র ভেঙ্গে দেওয়া পর্যন্ত এ একশন চলতে থাকবে। এসব চক্র ভেঙ্গে দিতে হবে। এতো উন্নয়ন, এতো অর্জন, আমাদের নেত্রীর এতো ত্যাগ, এতো সততা, এতো সাহস এর সোনালী ফসল আমাদের ঘরে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে উন্নয়ন ও অর্জনের কোন দাম নেই যদি আচরণ খারাপ হয়। ভাল ব্যবহার না করলে উন্নয়নের কোন দাম নেই। তাই আওয়ামীলীগের প্রতিটি কর্মীকে মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে।

সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেন, বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার সরকার। এটা কোন জামায়াত বিএনপি’র চারদলীয় সরকার নয় যে লুটে পুটে খাবে। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই দেশের সম্পদ নিরাপদ। এখানে কোন অপব্যবহার সম্ভাবনা নেই।