যুবলীগের সম্মেলনে (কংগ্রেস) অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না সংগঠনটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। কংগ্রেসের কাউন্সিলর, ডেলিগেট বা অতিথি কোনও পর্যায়েই তিনি আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না। এর বাইরে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও শেখ আতিয়ার রহমান দিপুসহ বিতর্কিতদেরও সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আগামী শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের ৭ম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

সম্মেলন উপলক্ষে যুবলীগ সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেট, অতিথিসহ প্রায় ৩০ হাজার ব্যক্তি উপস্থিত থাকবে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। যুবলীগের সম্মেলনে চেয়ারম্যানসহ বিতর্কিতরা থাকবেন না এটা আগে থেকেই চাউর ছিল। সর্বশেষ এসব ব্যক্তিকে কাউন্সিলর বা ডেলিগেট হিসেবে মনোনয়ন না দেওয়া কিংবা তাদের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ পত্র ইস্যু না করায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস সামনে রেখে গত ২০ অক্টোবর যুবলীগের একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। ওই প্রতিনিধি দলে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও শেখ আতিয়ার রহমান দিপুকে না রাখার জন্য গণভবন থেকে আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে বিতর্কিত অন্যদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও ওমর ফারুককে চেয়ারম্যানের পদ অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্যসচিব করে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই পদবাণিজ্য ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত ওমর ফারুক চৌধুরী সমালোচনার মুখে পড়েন। পরে প্রভাবশালী এই যুবলীগ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করার পাশাপাশি তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়। ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসার পর পরই ওমর ফারুক চৌধুরী অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। বর্তমানে অনেকটা গৃহবন্দির মতো ধানমন্ডির বাসায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। গণমাধ্যমকেও এড়িয়ে চলছেন তিনি। তবে, দুয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনে তার এ পরিণতির জন্য গণমাধ্যমকেই দায়ী করেছেন তিনি। তাকে নিয়ে গণমাধ্যমসহ বাইরে যেভাবে আলোচনা-সমালোচনা হয় তাতে বাইরে যাওয়ার মতো অবস্থাতে তিনি নেই বলেও জানান।

এদিকে চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিষয়ে যুবলীগের কোনও পর্যায়ের নেতা-কর্মীর কথা বলার সুযোগ না থাকলেও ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় কালে কয়েকজন নেতা প্রথমে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। তার বিরুদ্ধে পদবাণিজ্যসহ নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তোলা হয়। এর আগে ১১ অক্টোবর যুবলীগ প্রেসিডিয়ামের সভায়ও ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে পদবাণিজ্যসহ ক্যাসিনো, দরপত্র ও চাঁদাবাজির কমিশন পেয়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। ওই সভায় চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত সংগঠনের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিসকে বহিষ্কার করা হয়।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ওমর ফারুক চৌধুরীসহ যারা গত ২০ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে মতবিনিময়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি তাদের সম্মেলনে আমন্ত্রণ করা হচ্ছে না। এর বাইরেও বিতর্কিত কেউ থাকলে তারা সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাবেন না।

যাদের কাউন্সিলর বা ডেলিগেট করা হয়নি বা আমন্ত্রণ জানানো হয়নি তাদের কংগ্রেসে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই জানিয়ে এই নেতা বলেন, কংগ্রেসের কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও অতিথিদের একটি তালিকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকায় সেখান থেকে নতুন কোনও সংযোজন-বিয়োজন বা কোনও নির্দেশনা এলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, যারা যুবলীগ করে তারা সংগঠনটির সম্মেলনে যাবেন। আমি আওয়ামী লীগ করি, ভোলা লালমোহন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া ভোলা জেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য। আওয়ামী লীগের রাজনীতি সক্রিয় হওয়ার পর আমি আর যুবলীগের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সক্রিয় নেই।

প্রসঙ্গত: যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শাওন ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। গত ২০১৪ সালের ৬ জুন অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এর দুই বছর আগে ২০১২ সালের ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত যুবলীগের কংগ্রেসের পর তিনি সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হন।

সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। আমরা মনে করি একটি নান্দনিক সম্মেলন হবে।