গাজীপুর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা হলেও সেখানে যাচ্ছে না টিসিবি’র পেঁয়াজ। বিদেশী পিঁয়াজ বাজারে পৌঁছালেও দাম নেই নিয়ন্ত্রণে। জনবহুল এ জেলার খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২৫০টাকা দরে। ফলে বেশী মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এনিয়ে এলাকাবাসী অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা ঢাকার ও নারায়নগঞ্জের ন্যায় গাজীপুরেও টিসিবি’র মাধ্যমে পিঁয়াজ বিক্রির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন বানিজ্যমন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি।

গাজীপুর জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম জানান, গাজীপুরে টিসিবির পিঁয়াজ সরবরাহ নেই। তবে গাজীপুরের খুচরা বাজারে পিঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। পিঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে গত ২৪ নবেম্বর স্থানীয় ২৫-৩০টি বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত বাজারে গিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পিঁয়াজের ক্রয় রশিদ ও বিক্রয়মূল্য যাচাই করছেন। অসঙ্গতি পেলেই জরিমানাসহ শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে চান্দনা-চৌরাস্তা বাজারে দেখা গেছে, মিশরের পিঁয়াজ প্রতি কেজি ১৮০টাকা, বার্মার পিঁয়াজ ১৮০-১৯০টাকা, দেশী হাইব্রিড পিঁয়াজ ২০০টাকা এবং দেশী জাতের পিঁয়াজ ২৩০-২৫০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ওই বাজারের পিঁয়াজ ব্যবসায়ী এনামুল হক জানান, দেশী পিঁয়াজ প্রতি কেজি ২২০টাকা, মিশরের পিঁয়াজ ১৬০টাকা ও বার্মার পিঁয়াজ প্রতিকেজি ১৮৫-১৯৩টাকা দরে পাইকারী বাজারের আড়ৎ থেকে কিনতে হচ্ছে। আবার পরিবহণের সময় প্রতিবস্তায় ৪/৫ কেজি করে পিঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। তাতে আমাদের পিঁয়াজ ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষেত্রে লোকসানেও পিঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। একই কথা জানান, ওই বাজারের পিঁয়াজ ব্যবসায়ি ইব্রাহিম খলিল, নুরুল আমিন, রাজু মিয়া। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জয়দেবপুর বাজার, বোর্ডবাজার, টঙ্গীসহ আশেপাশে বিভিন্ন বাজারেও একই চিত্র পাওয়া গেছে।

জয়দেবপুরের বাসিন্দা রেজাউল বারী বাবুল ও দেবেশ মল্লিক জানান, গাজীপুরে পিঁয়াজের মূল্য কয়েকদিন আগে কিছু কমলেও এখন আবার বেড়ে প্রতিকেজি পিঁয়াজ ১৮০টাকা থেকে আড়াইশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গাজীপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। রাজধানী সংলগ্ন এ জেলায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। এখানে কল-কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ দেশী/বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কর্মরত লাখ লাখ লোকের বসবাস। দেশে বিদেশী পিঁয়াজ বাজারে আসলেও মূল্য নিয়ন্ত্রণে না আসায় এলাকাবাসীর মাঝে অসন্তোষ ও ক্ষোভ রয়েছে। তারা নারায়নগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকার মত টিসিবি’র মাধ্যমে গাজীপুরেও পিঁয়াজ বিক্রির দাবি জানিয়েছেন বানিজ্যমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের কাছে।

গাজীপুরের কাপাসিয়ার টিসিবি’র ডিলার মেসার্স আমজাদ ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী মো. আমজাদ হোসেন জানান, গাজীপুরের জন্য টিসিবি ডিলারদের পিঁয়াজ সরবরাহ করছে না। এছাড়া গাজীপুরের ডিলারদের কম পরিমানে টিসিবি পন্য (যেমন-তেল,ডাল, চিনি) দেয়ায় ও মুনাফা কম পাওয়ায় ওইসব পণ্য বিক্রির প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। কারণ ওইসব পণ্যের যে মুনাফা তারা পান তাতে তাদের পণ্য পরিবহণ খরচ, ঘর ভাড়া, শ্রমিক খরচে তাদের পোষায় না। খুচরা বাজার মূল্য ও টিসিবির মূল্যের খুব একটা ব্যবধান না থাকায় অল্প টাকার জন্য নাগরিকরা পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়ায় না। পণ্যের পরিমান যদি বাড়িয়ে দেয়া হত এবং মুনাফা বেশি পাওয়া যেত তাহলে ওই পণ্য বিক্রিতে ডিলারদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেত।

টিসিবি’র তথ্য কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, রাজধানীর ঢাকায় ৫০টি পয়েন্টে এবং নারায়নগঞ্জে ২টি পয়েন্টে টিসিবি’র পিঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পিঁয়াজের আমদানি বাড়লে গাজীপুরসহ আশেপাশের জেলায় তারা পিঁয়াজ বিক্রি করবেন।