রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বেকারিতে হামলা মামলার রায়ে আট আসামির মধ্যে সাতজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান নামে এক আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বিচার শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় আজ বুধবার দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, জাহাঙ্গির হোসেন, আসলাম হোসেন র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. আব্দুল সবুর খান, শরিফুল ইসলাম খালেক ও মামুনুর রশীদ রিপনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ৬ (২) (অ) ধারায় দোষীসাব্যস্ত করা হলো এবং তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হলো।

এর আগে দুপুর ১২টায় মামলার রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে প্রিজনভ্যানে কারাগার থেকে আসামিদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এসময় প্রিজনভ্যান থেকে নেমে আঙুল উঁচিয়ে হাসিমুখে আদালতের ভেতর প্রবেশ করে আট আসামি। এরমধ্যে একজনের পায়ে সমস্যা থাকায় সে ক্রাচে ভর করে আদালতে প্রবেশ করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানের ওই হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২৩ জন নিহত হয়েছিলেন। ওই হামলার পর ৪ জুলাই রাতে গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আটজন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির।

চার্জশিটে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত পাঁচ হামলাকারী রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল নিহত হওয়ায় তাদের নাম চার্জশিটে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, সারোয়ান জাহান মানিক, তানভীর কাদেরী, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট, রায়হান কবির ওরফে তারেক, মেজর (অব) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান নিহত হওয়ায় তাদের নামও চার্জশিটে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। একই বছর ২৬ নভেম্বর আদালত ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন। ওই বছর ৩ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছর ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৬ কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনাল চার্জশিটের ২১১ সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্যসম্পন্ন হয়।

এর পর চলতি বছর ৩০ অক্টোবর আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি হয়। সেখানে সব আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে কেউ মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। গত ৬ নভেম্বর থেকে দুই কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৭ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য হয়। চার্জগঠন থেকে যুক্তিতর্ক পর্যন্ত মোট ৫২ কার্যদিবসে মামলার বিচার সম্পন্ন হয়।