হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলার রায়ের দিন ‘আইএস চিহ্ন’ সম্বলিত টুপি জঙ্গি রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পায়, নাকি কারাগার থেকে নিয়ে আসে এ নিয়ে আলোচনা চলমান। কারা কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে বলেছে ওই টুপি কারাগার থেকে যায়নি। যদিও পুলিশ বলছে টুপিটি এসেছে কারাগার থেকেই। দুপক্ষের এ বক্তব্যের মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার আদালতের কাছে মুখ খুলেছে জঙ্গি রিগ্যান রায়ের দিন কেউ একজন ভিড়ের মধ্যে টুপিটি দিয়েছিল। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে সে এ তথ্য জানায়। রিগ্যানের এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন আদালতের নিরাপত্তায় কোনো গলদ ছিল কিনা, এখন সে প্রশ্নটিই সামনে চলে এসেছে।

আইএসের টুপিকা-ে তোলপাড়ের পর গতকাল একই আদালতে জঙ্গিদের উঠানো ও নামানোর সময় নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রিগ্যানসহ সাত আসামিকেই হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো হয়। মামলাটির শুনানিকালে এজলাস কক্ষে কোনো সাংবাদিককেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে পর্যন্ত উঠতে দেওয়া হয়নি সংবাদিকদের। তাহলে রায়ের দিন কেন পুলিশের পক্ষ থেকে গতকালের ন্যায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলো না এ প্রশ্নটিও করা হচ্ছে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে। তারা বলছেন, ওইদিন পুরো আদালত প্রাঙ্গণজুড়েই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল ঠিক। তবে আসামিদের প্রিজনভ্যান থেকে হাজতখানা এবং আদালতের এজলাসে আনা নেওয়ার সময় পুলিশের দূরদর্শিতার অভাব ছিল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রায়ের দিন পুলিশ, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ভিড়ের মধ্যে ঢুকে আত্মঘাতী জঙ্গিদের যেকোনো ধরনের অঘটন ঘটানোর আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আলোচিত ওই মামলার রায়ের দিন পুলিশের নিরাপত্তায় কোনো গলদ ছিল না। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা আরও সুরক্ষিত হতে পারতো। জঙ্গিদের আদালতে আনা নেওয়ার সময় কেউ যেন তাদের ধারে-কাছে ভিড়তে না পারে সেদিকটায় নজর দেওয়া উচিত ছিল।’
এদিকে রাজধানীর কল্যাণপুরে ‘জাহাজ বিল্ডিং’ জঙ্গি আস্তানার মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১০ আসামির মধ্যে রিগ্যানও রয়েছে। ওই মামলায় রিগ্যানসহ ৭ আসামিকে গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নিচতলায় হাজতখানায় এনে রাখা হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ওই ট্রাইব্যুনালেই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলার রায় হয়। পলাতক আসামি আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিটের সম্পত্তি ক্রোকের বিষয়ে প্রতিবেদন আসায় বিচারক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন।

এর পর বিচারক মজিবুর রহমান কাঠগড়ায় থাকা রিগ্যানকে প্রশ্ন করেন হলি আর্টিজান মামলার রায়ের দিন ‘আইএস টুপি’ সে কোথায় পেয়েছে? উত্তরে রিগ্যান জানায়, ‘ভিড়ের মধ্যে কেউ দিয়েছে।’ কে দিয়েছে বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে আসামি বলেন, ‘তাকে চিনি না।’ বিচারক তখন প্রশ্ন করেন ‘কেন নিলেন’, জবাবে রিগ্যান বলে, ‘টুপিটিতে কলেমা সাহাদাৎ লেখা ছিল। তাই নিয়ে ভালো লাগায় পরি।’ এর পর বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘আর কাউকে ওই টুপি দিয়েছে কিনা?’ জবাবে রিগ্যান বলেন, ‘আর কাউকে দেয়নি। তবে আমাকে দেওয়া টুপিই প্রিজনভ্যানে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী পরেছিল।’

গুলশান হামলার আসামির আইএসের চিহ্ন সম্বলিত টুপি পরার বিষয়টি ‘অ্যালার্মিং’ কি না এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেন, ‘কোনো অ্যালার্মিং নয়, একটা কাপড়, একটা টুপি মাথায় দিয়েছে। এটায় অ্যালার্মিংয়ের কী বিষয় আছে? এরা তো সবসময়ই বলছে এরা ওই মতাদর্শী। আমরা সবসময় বলেছি, আমাদের দেশে এগুলো নেই। এগুলো সব হোমমেইড জঙ্গি। আর ওরা ওখানে (আইএস) কানেক্টেড হতে চেয়েছে, এটা সবসময় বলেছে।’

টুপির উৎস জানা গেছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ না কেউ তো দিয়েছে। কে দিয়েছে, তা আমিও জানতে চাই। আমরা একটু জেনে নিই। কারণ বন্দিটাকে (আদালতে) নিয়ে গেছে যখন, তখন জনগণের ভেতর দিয়েই তো গেছে। কীভাবে পেয়েছে, সেটা আমাদের এখন একটু দেখার বিষয়। আমরা দেখে নিই। না দেখে এটার সম্পর্কে আমরা বলতে পারব না। তবে আমরা যেটুকু দেখেছি, কারাগার থেকে এমন কিছু আসেনি, সেটা কারা কর্তৃপক্ষ বলছে। পুলিশ বলছে তারা এটা সাপ্লাই হতে দেখেনি। কাজেই কীভাবে আসল, তদন্তের বাইরে আমরা কিছু বলতে পারব না। আমরা পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেব, এটা কীভাবে পেয়েছিল।’ কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে আরেকটি তদন্ত করবেন কি না প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই হবে। বেরিয়ে আসবে, সবই আসবে।’