গাজীপুরে খোলাবাজারে ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বুধবার দুপুর থেকে জেলার ৫টি পয়েন্টে একযোগে পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। ওই পেঁয়াজ কেনার জন্য ক্রেতাদের প্রচন্ড আগ্রহ ও ভিড় দেখা গেছে। তবে ডিলারদের দাবি ওই পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে ক্রেতাদের দাবি তাদের প্রতি কেজি ওজনের পেঁয়াজে ২০০/৩০০গ্রাম কম দেয়া হচ্ছে।

বুধবার দুপুর থেকে জেলা শহরের মুক্তমঞ্চে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আবু নাসার উদ্দিন। এসময় গাজীপুর জেলা বাজার কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সালামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠ, কড্ডা বাজার, বোর্ডবাজার ও কাপাসিয়ায় ট্রাকে করে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে ডিলাররা। প্রতি ক্রেতার নিকট এক কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার জেলা শহরের মুক্তমঞ্চে ও রাজবাড়ি মাঠে ট্রাকে প্রতি কেজি টিসিবি’র পেঁয়াজ ৪৫টাকা বিক্রি হচ্ছে এমন খবর পেয়ে ওইসব স্থানে মুহুর্তের মধ্যে ক্রেতাদের ভিড় জমে উঠে। শহরে হঠাৎ ট্রাকের পেছনে জনতা ছুটতে দেখে হেমিলনের বাঁশিওয়ালার চিত্র ফুটে উঠে। কার আগে কে পেঁয়াজ কিনবে শুরু হয় তার প্রতিযোগিতা। পেঁয়াজ নিয়ে যেন শুরু হয় কাড়াকাড়ি। অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ট্রাকে করে আনা পেঁয়াজ।

গাজীপুর মহানগরের বিলাশপুর এলাকার বাসিন্দা অসিত চন্দ্র সাহা জানান, তিনি বুধবার দুপুরে মহানগরীর জয়দেবপুর বাজারের মুক্তমঞ্চ এলাকায় প্রচন্ড ভিড় ঠেলে ট্রাক থেকে ৪৫টাকায় এক কেজি টিসিবি’র পেঁয়াজ কিনেছেন। পরে তিনি মেপে দেখেন এক কেজির স্থলে পেঁয়াজ হয়েছে ৮০০গ্রাম।

টিসিবি ডিলার মেসার্স খোরশেদা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মোরশেদ আলম মুকুল জানান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় ডিলারদের চারটন করে পেঁয়াজ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের দুই দিনে বিক্রির জন্য মাত্র দুইটন পেঁয়াজ দেয়া হয়েছে। তাদের দাবি প্রতিকেজি পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য ৪০.৬০ টাকা এবং বিক্রয়মূল্য ৪৫টাকা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে ওই পেঁয়াজ আনতে ট্রাক ভাড়া গেছে ২হাজার টাকা, জেলা শহরে বিভিন্ন স্পটে ওই পেঁয়াজ বিক্রির জন্য ট্রাক ভাড়া দৈনিক ২৫০০টাকা এবং গড়ে তিন শ্রমিকের জন্য তাদের মজুরী দিতে হয় ১৫০০টাকা। আবার একটন পেঁয়াজে ১৫-২০কেজি নষ্ট বের হয়। ১৫-২০কেজি পেঁয়াজ অবিক্রিত থাকায় তাদের প্রায় সাড়ে ৮শ’ টাকার লোকসান হচ্ছে। প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন ২০০/৩৫০ গ্রাম। পেঁয়াজের আকৃতি বড় হওয়ায় সঠিক ওজনে বিক্রি করা সম্ভব হয়না। আবার ক্রেতাদের কম ওজনেও কম পেঁয়াজ দেয়া যাচ্ছে না। এতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের ওজনে বেশিও দিতে হচ্ছে। কারণ পেঁয়াজতো কেটে বিক্রি করা সম্ভব নয়। কম পেঁয়াজ বিক্রি করে তাদের ওই লোকসান উঠানো সম্ভব নয়। তাই তারা বেশি পেঁয়াজ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। একই কথা জানিয়েছেন অন্য ডিলাররাও।

সবমিলে এক টন পেঁয়াজের বিক্রয় ও ক্রয়মূল্যের যে তফাৎ হয় তাতে শুধু পেঁয়াজ বিক্রি করে লোকসানের পাল্লাই আমাদের ভারী হচ্ছে। পেঁয়াজ ছাড়া তাদের টিসিবি’র যে পরিমান চিনি, ডাল ও তেল সরবরাহ করছে তা বিক্রি করেও পেঁয়াজের লোকসান উঠে না। ফলে টিসিবি’র পেঁয়াজ বিক্রিতে আগ্রহ হারাচ্ছে ডিলাররা।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, বুধবার থেকে পাঁচ ডিলারের মাধ্যমে গাজীপুরে টিসিবি’র পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তিনি টিসিবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার আশ^াস দিয়েছেন ডিলারদের।