পুলিশকন্যা রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় তার বন্ধু আব্দুর রহমান সৈকতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।রুম্পাকে সাবেক প্রেমিক সৈকত ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেছেন বলে সন্দেহ পুলিশের।

শনিবার আটক সৈকতকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে রোববার তাকে ঢাকার হাকিম আদালতে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ।শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ চার দিন হেফাজতের নির্দেশ দেন।সৈকতের পক্ষে তার আইনজীবী আবদুল হামিদ ভূইয়া রিমান্ড বাতিলের আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেন বিচারক।

শুনানিতে তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেই আসামির বাবা মারা গেছে। তারও সপ্তাহ খানেক আগে তার চাচা মারা যান। ঘটনার পর ডিবি পুলিশ ফোন করে ডাকলে সৈকত সেখানে উপস্থিত হয়। সে সাদা মন নিয়ে ডিবি অফিসে যায়।সদ্য বাবা হারানো একটা ছেলের পক্ষে এ ধরনের হত্যাকা- ঘটানোর মতো মানসিক অবস্থা থাকাটা অস্বাভাবিক। তাছাড়া এই মেয়ের যন্ত্রণায়ই সম্প্রতি সে স্টামফোর্ড ছেড়ে পড়াশুনার জন্য অন্যত্র ভর্তি হয়।

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান বলেন, যেহেতু আসামি পক্ষের আইনজীবী নিজেই স্বীকার করছেন মেয়ের যন্ত্রণায় ওই মেয়ে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছে, সুতরাং তার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের বিষয়টি প্রমাণিত। তাই তাকে মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড পরীক্ষাসহ প্রাপ্ত আলামত যাচাই-বাছাই করতে তাকে রিমান্ডে নেওয়া জরুরি।

রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার বন্ধু আব্দুর রহমান সৈকত; রোববার আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার বন্ধু আব্দুর রহমান সৈকত; রোববার আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।সৈকত (২২) আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বিবিএর ছাত্র। সৈকত নিহত রুম্পার (২১) সাবেক প্রেমিক বলে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রীর সহপাঠীদের ভাষ্য। সৈকতও আগে স্টামফোর্ডে পড়তেন।

গত বুধবার রাতে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর একটি গলিতে রুম্পার লাশ পাওয়ার পর তার মৃত্যু রহস্যজনক মনে হওয়ায় রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।ওই মামলায়ই সৈকতকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে, মামলাটি তদন্ত করছেন গোয়েন্দা পুলিশের ঢাকা দক্ষিণ বিভাগের পরিদর্শক শাহ মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস।

লাশ উদ্ধারের সময় রুম্পার পরিচয় জানা যায়নি। পরদিন শনাক্ত হয় যে রুম্পা হবিগঞ্জে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক রোকনউদ্দিনের মেয়ে, তিনি থাকতেন মা-ভাইসহ মালিবাগে। যেখানে লাশ পড়েছিল, তার আধা কিলোমিটারের মধ্যে তাদের বাসা।

রুম্পার লাশ শনাক্ত হওয়ার পর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একে হত্যাকান্ড দাবি করে তার বিচারের দাবিতে সড়কে নামে। তাদের মুখে আসে সৈকতের নাম। তারপর শনিবার সন্ধ্যার পর খিলগাঁও এলাকা থেকে সৈকতকে আটক করে পুলিশ।তবে রুম্পার মৃত্যুর বিষয়টি এখনও রহস্যময় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে।লাশ পাওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছিল, আশপাশের উঁচু কোনো ভবন থেকে পড়ে রুম্পার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও সেই ইঙ্গিতই রয়েছে। কিন্তু আশপাশের ভবনগুলোর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে প্রামাণ্য কিছু পায়নি পুলিশ।

তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যে তিনটি ভবনের মাঝে রুম্পার মৃতদেহ পাওয়া গেছে, সেখানকার একটি ভবনের প্রবেশমুখে ৬টা ২৭ মিনিটে রুম্পার শারীরিক গঠনের মতো একজনকে ঢুকতে দেখা গেছে। কিছুটা অস্পষ্ট ওই ছবি, ফলে সেটা রুম্পা কি না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সৈকতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রহস্যের জট খুলবে বলে আশা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।রিমান্ডের আবেদনে শাহ মো. আকতারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, সৈকতসহ তার সঙ্গীরা রুম্পাকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেন বলে জোর সন্দেহ করছেন তারা।

তিনি বলছেন, ৪ ডিসেম্বর রাতে রুম্পার লাশ পাওয়ার আগে বিকালে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের বাইরের রাস্তায় তাকে সৈকতের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল।

তখন প্রেম-ভালবাসা নিয়ে কথা উঠলে আসামি সৈকত কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য রুম্পাকে অনুরোধ করলে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যসহ বিরোধ চরম আকার ধারণ করে মর্মে সাক্ষ্য প্রমাণ আসিতেছে।এরই প্রেক্ষিতে উক্ত মনোমালিন্যের পর রাত ২২:৪৫ ঘটিকায় ভিকটিমকে উক্ত আসামিসহ তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামিরা মিলে হত্যা করত লাশ ছাদ থেকে ফেলে দেয় মর্মে জোর সন্দেহ করা হইতেছে।

রুম্পার এক বান্ধবীর সঙ্গে সৈকতের যে কথোপকথনের অডিও ক্লিপ ছড়িয়েছে, তাতেও স্পষ্ট ঘটনার দিনও রুম্পার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল।

অডিওতে সৈকতকে বলতে শোনা যায়, ৪ তারিখে আমার একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিল। আমাকে ইনভাইট করা হয়েছিল আমাদের ফ্রেন্ডের মাধ্যমে। দেন আমি ওইখানে গেছিলাম আর কি। আমি তো রুম্পাকে বুঝায়ে বলছি যে আমাদের মধ্যে রিলেশন সম্ভব না।

পরিবারের সদস্যরা জানান, দুটো টিউশনি করতেন রুম্পা। সেদিনও সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে টিউশনিতে বের হয়েছিলেন। পরে সাড়ে ৬টার দিকে বাসার নিচে এসে ফোন করে পুরানো একজোড়া স্যান্ডেল পাঠিয়ে দিতে বলেন। স্যান্ডেল বদলানোর সময় কানের দুল, আংটি, মোবাইল ফোন দিয়ে আবার বেরিয়ে যান তিনি।