দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, চলমান শুদ্ধি অভিযানে অনেক রাঘব বোয়ালের নাম এসেছে। এসব রাঘব বোয়ালরা কেউই ছাড় পাবে না। সুস্থ হলে সম্রাটকেও হাসপাতাল থেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

রোববার (৮ই ডিসেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে দুদক কার্যালয়ে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ কথা বলেন।

দুদক চেয়ারমান বলে, দুদকের ফাঁদ মামলার কারণে সরকারি অফিসে ঘুষের প্রবণতা কিছুটা কমেছে বলে আমরা মনে করছি। তবে ঘুষ লেনদেন হচ্ছে না, আমরা তা বলবো না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে ঘুষের মাত্রা কমেছে।এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দার কাছে তথ্য পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরে দুদকে লিখিত অভিযোগই এসেছে ২২ হাজার ২ শ ৩৬টি। এরমধ্যে ৩ হাজার অভিযোগের ওপর অনুসন্ধান চলছে।

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, বেসিক ব্যাংকের টাকা কোথায় গেল, কিভাবে গেছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত মামলার চার্জশিটে তা উল্লেখ থাকবে। তিনি আরও বলেন, বেসিক ব্যাংকের মামলার চার্জশিট অনুমোদন চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। সেখানে টাকা কোথায় গেল সে তথ্য না থাকায় কমিশন চার্জশিট গ্রহণ করেনি।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, বেসিক ব্যাংকের টাকা কোথায় গেলো সে তথ্য তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ না করে আদালতে দাখিল করলে সেখানেও প্রশ্ন উঠবে। একজন তদন্ত কর্মকর্তা যদি টাকার শেষ গন্তব্য কোথায় তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে না পারেন তাহলে এই প্রতিবেদন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে? আমাদের বক্তব্য হলো যতক্ষণ না বেসিক ব্যাংকের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনে টাকা কোথায় গেলে তার সন্ধান পাওয়া না যাবে ততক্ষণ চার্জশিট দেওয়া হবে না। তবে আমরা আশা করছি টাকা কোথায় গেলে তার সন্ধান পাবো।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, বর্তমানে দুদকের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মামলায় শাস্তি হচ্ছে না। তার মানে আমাদেরও দুর্বলতা আছে। প্রতিটি মামলায় শান্তি হওয়া উচিত। যেমন মানি লন্ডারিংয়ে দুদকের প্রতিটি মামলায় শাস্তি হয়েছে। তাই আমরা যেনতেন ভাবে বেসিক ব্যাংকের মামলার চার্জশিট দিতে চাই না। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির কিছু টাকা মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ সেসব দেশে গেছে, দুদক সেখানে মিউচুয়াল লিগ্যাল এসিস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট (এমএলএআর)পাঠিয়েছে। সেখান থেকে তথ্য পাওয়া গেলে মামলাগুলোর চার্জশিট দেয়া হবে।

তিনি বলেন, দুদকের মামলায় ১৮০ দিনের মধ্যে চার্শশিট দেওয়ার কথা থাকলেও কোন কোনো ক্ষেত্রে তা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন পুলিশের বহু জঠিল মামলা বছরের পর বছর চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে না।

মামলার চার্জশিটে আবদুল হাই বাচ্চুর নাম থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, যারা বলছেন বাচ্চুর নাম রাখতে হবে, নাই কেন? আমি বলবো, আপনি বাচ্চুকে ধরার কথা বলছেন, আপনি কে ? আপনি কি আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন? বাচ্চুকে নিয়ে কে কি বলছেন সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, কেউ আমার পদত্যাগ চাইতে পারেন, অনেক কিছু চাইতে পারেন কিন্তু আপনি কে যে বলছেন বাচ্চুর নাম আসছে, কি আসে না ? এটা তদন্তাধীন বিষয়। বাচ্চুর নাম আসবে না আপনি জানেন কিভাবে? আমরা কারও সাজেশন নেব না।

মানি লন্ডারিং প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের মানি লন্ডারিং মামলায় শতভাগ শাস্তি হয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং মামলা দুদক থেকে নিয়ে এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং সিআইডিকে মামলা করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সিআইডি মানি লন্ডারিং বিষয়ে ৬০-৭০টি মামলা করেছে, এনবিআর করেছে মাত্র এক থেকে দুটি। অথচ এনিবিআরের সবচেয়ে বেশি মামলা করা উচিত। আমাদের ধারণা ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। দেশে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, ক্যাপিটাল গুডস আনার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি দায়িত্ব পাওয়ার পরেও মানি লন্ডারিংয়ে মামলা না করে আমরা তাদের নজরদারির মধ্যে রাখব। তিনি বলেন, অবৈধ অর্থই কেবল মানি লন্ডারিং হচ্ছে, এটা প্রাইভেট সেক্টরে হোক আর সরকারিভাবে হোক তা মানি লন্ডারিং। কারণ হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করা সম্ভব নয়।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ট্রেড বেইজড মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি টাকা পাচার হচ্ছে। কারণ এই পথে লিগ্যালি টাকা বিদেশে যাচ্ছে। অবৈধ সম্পদ কোথায় যাচ্ছে এ বিষয়ে আমাদের সার্বক্ষণিক জরদারি রয়েছে।

সাংবাদিকদের সংগঠন- রিপোর্টার্স এগেইনস্ট করাপশন (র‌্যাক) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব দিলোয়ার বকত, র‌্যাক সভাপতি মোর্শেদ নোমান ও সাধারণ সম্পাদক আদিত্য আরাফাতসহ আরও অনেকে ।