বিগত ১৬ বছর ধরে একে একে ১০টি নাট্যোৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ‘প্রাঙ্গণেমোর’ নাট্যদল ২০১৯ সালে আয়োজন করে ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা ২০১৯’। ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ দিনব্যাপি এ নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে। নাট্যমেলায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লি থেকে ৪টি এবং বাংলাদেশের ৫টি উল্লেখযোগ্য প্রযোজনার প্রদর্শনী হয়।

৬ ডিসেম্বর নাট্যমেলায় উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও নির্দেশক আসাদুজ্জামান নূর (এমপি), প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালেদ এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দুতাবাসের হাইকমিশনার শ্রীমতী রীভা গাঙ্গুলি দাশ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

১৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় ‘‘থিয়েটারের সংকট- দর্শক না ভালো নাটক’’ শিরোনামে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে ধারণাপত্র পাঠ করেন হাসান শাহরিয়ার এবং মূখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বপন রায়, মলয় ভৌমিক, আহমেদ ইকবাল হায়দার, রতন সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আলী হায়দার, রহমান রাজু। এ আলোচনায় সভাপতি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যজন মামুনুর রশীদ এবং সঞ্চালক হিসাবে ছিলেন অনন্ত হিরা। এছাড়া একই দিন সন্ধ্যা ৬ টায় প্রদান করা হয় “প্রাঙ্গণেমোর নাট্যযোদ্ধা সহযোদ্ধা সম্মাননা ২০১৯” । সম্মাননা প্রদান করা হয় নাট্যযোদ্ধা মামুনূর রশীদের সহধর্মিনী গওহর আরা চৌধুরী, নাট্যযোদ্ধা আতাউর রহমানের সহধর্মিনী শাহিদা রহমান এবং নাট্যযোদ্ধা লিয়াকত আলী লাকীর সহধর্মিনী কৃষ্টি হেফাজ কে।

নাট্যমেলার শেষ দিন মঞ্চায়িত হবে দিল্লির গ্রীণ রুম থিয়েটারের দর্শক নন্দিত নাটক বিসমিল্লা। নাটকটি রচনা করেছেন সুমনা কাঞ্জিলাল এবং নির্দেশনা দিয়েছেন অঞ্জন কাঞ্জিলাল। বিসমিল্লা নাটকে নামভুমিকায় অভিনয় করেছেন অনুভব কাঞ্জিলাল । এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন, শিঞ্জিনী ব্যানার্জি, সোমা ব্যানার্জি, দেবযানী ব্যানার্জি, রূপা কর্মকার, সুমনা কাঞ্জিলাল, মনীষ নস্কও, সুখাংশু চ্যাটার্জি, সুহান বসু, অনুসূয়া ঘোষ, উপাসনা সোমা, অয়ন ব্যানার্জি, প্রভাত সর্দার, শিব রঞ্জন ব্যানার্জি, প্রহ্লাদ সরদার দ্বিতীয়, সুদীপ বিশ^াস, শম্পা দাস, অঞ্জন কাঞ্জিলাল।

নাট্য সংক্ষেপ:
সত্তরের দশকের একটি বিখ্যাত পত্রিকার দুই রিপোর্টার বিশ শতকের শুরুর দিকের এক বিখ্যাত অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার নিতে যায়। পতিতা পল্লী থেকে উঠে আসা সেই অভিনেত্রী খুলে ধরে তাঁর জীবনের এক একটি পাতা। যে পাতায় বেরিয়ে আসে তখনকার সমাজ, তাঁর রক্ষিতার জীবন, তাঁর ওপর শারীরিক মানসিক অত্যাচার আর তাঁর প্রেম-এক বেহালা বাদক বিসমিল্লা। নিরক্ষর এই অভিনেত্রী তারাময়ী কি করে অন্ধকার থেকে আলো এবং প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে আবার হারিয়ে যায় সেই অন্ধকারে এ নাটক তাঁর এক জ¦লন্ত দলিল। যদিও তারাময়ী কোন ঐতিহাসিক চরিত্র নয় কিন্তু আজ যে সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম থিয়েটারের সার্থকতা নিয়ে আমরা গর্বিত হই, অহংকার করি-সেই অহংকারের ইমারৎ তৈরী হয়েছে কিছু অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত গণিকার থিয়েটারের প্রতি নিঃস^ার্থ ভালোবাসা আর আত্মত্যাগে।

এ নাটক আজ থেকে একশ বছর আগের থিয়েটারের মানুষদের নিয়ে। কিছু আবেগ, কিছু স্বার্থ, কিছু প্রেম আর কিছু আত্মত্যাগ- যার নাম ‘বিসমিল্লা’।