ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল মাঠে বিজয় দিবস কনসার্টে দর্শক মাতালেন মমতাজ, জেমস, ফকির আলমগীর ও চিরকুটসহ অন্যান্য শিল্পীগণ।

মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল রাখার প্রয়াসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে ‘গৌরবময় বিজয়ের ৪৮ বছর’ শিরোনামে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে।

মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঞ্চ মাতান সংগীত সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম, জেমস ও তার ব্যান্ড নগর বাউল এবং চিরকুট ব্যান্ডের শারমিন সুলতানা সুমিসহ অন্যান্য সংগীত শিল্পীবৃন্দ। বিজয়ের গান পরিবেশন করেন ফকির আলমগীর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন দেবাশীষ বিশ্বাস ও ইসরাত পায়েল।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে শুরুতে ছিল বাংলাদেশ পুলিশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীবৃন্দ কর্তৃক মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং ডাকসুর পরিবেশনা ।

মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষকবৃন্দ ও বাংলাদেশ পুলিশের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সম্মাননা প্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, আবু নাসের ম. মনিরুজ্জামান, আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, মোঃ আবুল খায়ের, মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা, এস এম এ রাশিদুল হাসান, মোঃ আব্দুল মুকতাবির, গিয়াস উদ্দিন ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী।

সম্মাননা প্রাপ্ত বাংলাদেশ পুলিশের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন ডিআইজি মামুন মাহমুদ, পুলিশ সুপার এম শামসুল হক, পুলিশ সুপার মুন্সী কবির উদ্দিন আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ আব্দুল মজিদ, এসডিপিও ফজলুর রহমান আহমেদ, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, ইন্সপেক্টর মোঃ আবদুল হামিদ, ইন্সপেক্টর আব্দুল কাদের মোল্লা, আরআই আকরাম হোসেন, এসআই শিরু মিয়া ও তার ছেলে শহীদ কামাল।

সম্মাননা প্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের নিকট হতে সম্মাননা গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। বিজয় যেন সকলের জন্য সমান হয়, সবার কাছে পৌঁছে যায় এজন্য পুলিশ এই উদ্যোগ নিয়েছে। গৌরবময় বিজয়ের ৪৮ বছর উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষক এবং শহীদ পুলিশ সদস্যদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেন, বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তার নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র। মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আজ পুলিশ ও ছাত্ররা মিলেমিশে এমন সুন্দর একটি আয়োজন করেছে। এই বিজয় দিবসে যারা মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ করেছেন তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাদের আত্মত্যাগ ও রক্তদান বাংলাদেশ চিরদিন মনে রাখবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে রয়েছে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর তথ্য মতে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ইন্ডিয়ার পরে বাংলাদেশের অবস্থান। আমরা চাই প্রতিটি ঘরে একজন ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে। আমরা গ্রাম পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স আক্রমণ করেছিল। রাজারবাগ থেকে সর্বপ্রথম থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করা হয়। আমরা আপনাদের পাশে আসতে চাই, আপনাদের পাশে থাকতে চাই। মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার। পুলিশের পক্ষ থেকে মুজিববর্ষে এই শ্লোগানটি নেয়া হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) শিক্ষার্থীদের মাদক ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানটির টাইটেল স্পন্সর আইএফআইসি ব্যাংক ও কো-স্পন্সর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এশিয়ান টিভি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হল মাঠ থেকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে।