কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমানে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এখন শুধু প্রয়োজন সুশাসন নিশ্চিত করা। দেশের কৃষি বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাজারে সুশাসনের অভাব রয়েছে বলেই দেশে পিঁয়াজের দাম এতোটা বেড়েছে।

তিনি বলেন, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে। এখান থেকে পেছনে ফিরে যাওয়ার কোন পথ নেই। এতে কৃষকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হতে পারবেন। আমরা নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য কৃষির উপর আমরা গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমরা যদি সবাই আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করি তবে সব ক্ষেত্রেই আমরা উন্নতি ও সু-শাসন নিশ্চিত করতে পারবো।

মন্ত্রী সোমবার গাজীপুরের জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) কর্তৃক আয়োজিত ‘কৃষক-উদ্যোগঃ বাণিজ্যিক কৃষির উদীয়মান চালক’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কৃষিকে এগিয়ে নিতে আমরা কৃষি যান্ত্রিকীকরণের একটি নীতিমালা করেছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় একটি এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং উইং করতে চাচ্ছি। এটি ধীরগতিতে এগোচ্ছে, আমি যেভাবে চাচ্ছি সেভাবে হচ্ছে না। যান্ত্রিকীকরণের বিষয়টি আগামীকাল মন্ত্রণালয়ের সভায় উঠবে। এব্যপারে সাবসিডিয়ারী দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে। কৃষিকে যান্ত্রিকী করণ করা হলে উৎপাদন খরচ কম হবে, চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবান হবে।

মন্ত্রী পিঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, পিঁয়াজ পচনশীল দ্রব্য। গতবছর পিয়াঁজ জমি থেকে ঘরে তুলে আনার আগে অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে পিঁয়াজের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অথচ আমাদের মার্কেটিং এবং এগ্রিকালচার এক্সটেনশন ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। বৃষ্টির কারণে দেশে পিয়াঁজের কি পরিমাণ উৎপাদন কম হয়েছে বা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার হিসেব ওই দু’ডিপার্টমেন্ট নিজেরা সমন্বয় করে নির্ণয় করা উচিত ছিল। অথচ তারা তা করেনি। নিজেদের মধ্যে সমম্বয়ের অভাবের কারণেই এটা হয়নি। যদি ওই হিসেব থাকতো তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা যেতো। এদিকে ভারত থেকে যে পরিমাণ পিয়াজ আমদানী করার কথা ছিল, ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তা আমরা করতে পরিনি। দেশে পেঁয়াজের মৌসুমে বাল্ব লাগিয়ে প্রায় ২লাখটন গুটি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। বাকি ২৩/২৪লাখ টন হয় মূল সিজনে, বীজ থেকে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে। পিয়াজের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা এ মৌসুমে পাতাসহ গুটি পিয়াজ বিক্রি করায় পিঁয়াজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই পিঁয়াজের দাম কমছে না। আমরা পিয়াঁজ আমদানীর জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশের দ্বারস্থ হচ্ছি। এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা কোথায় ?

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে গত প্রায় একবছরে আমরা ধান চাষীদের কাছে যেতে পারি নাই। আমরা বার বার বলছি ধান ও চাল রফতানির উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য ইনসেনটিভ প্রয়োজন। সরকার কৃষিপণ্য রফতানীতে ২০ ভাগ ইনসেনটিভ দেয়। কিন্তু কৃষিপণ্যের ফসলের ওই তালিকায় ধান বা চাউলের কথা উল্লেখ নেই। ফলে আজ যদি কেউ চাউল রফতানী করে তাহলে সে ওই ইনটেনসিভ পাবে না। মন্ত্রী হয়েও আমি গত ৮/৯ মাসে চালকে ২০ভাগ ইনটেনসিভ দেওয়ার তালিকাভুক্ত করতে পারিনি সমন্বয়ের অভাবের কারণে। ফলে ধান আবাদ করে চাষীরা লাভবান হচ্ছে না।

নাটা’র ভারপ্রাপ্ত মহা পরিচালক ড. মোঃ আবু সাইদ মিঞার সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এ্যামিরাটাস প্রফেসর ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার মন্ডল। অনুষ্ঠাণে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরউজ্জামান, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মান্নান আকন্দ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আব্দুল মুঈদ, নাটার উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইদুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পরিচালক শারমিন আক্তার প্রমুখ।

কৃষি মন্ত্রী আরো বলেন, দেশে মাশরুমকে লাভবান করার জন্য মাশরুম সেন্টারকে উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে কেন ব্যাপকভাবে মাশরুমের চাষ হচ্ছে না, মাশরুম রফতানী করতে কি কি সমস্যা হচ্ছে, সেসব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা দুর করার উপায়গুলো মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। নতুবা দেশে মাশরুম সেন্টার থাকার কোন প্রয়োজন নেই।

তিনি মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা কমচারীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, আপনারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজার প্রতিদিন মনিটর করে বিভিন্ন পণ্যসমূহের মূল্য দেখে পার্থক্যের তালিকা ও কারণ সমূহ নির্ণয় করে তৈরী করে আমাকে দিবেন। দেশে কোন্ শস্য কি পরিমান উৎপাদন হয়েছে, কি পরিমান ঘাটতি রয়েছে, কি পরিমান আমদানী করতে হবে তা-ও জানতে হবে। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীরা যেসব মহলে চাঁদা প্রদান করেন সেসব তালিকাও আমাকে জানাবেন, আমি এ ব্যাপার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলে ব্যবস্থা নিব।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী কৃষক দরদি ও কৃষক বান্ধব। দেশে ৭/৮লক্ষ টন ডিএপি সার লাগে।কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তিনি টিএসপি সারের দাম ২৫ টাকা থেকে ১৬ টাকায় নামিয়ে এনেছেন। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কৃষদের জন্য এটি তাঁর বিজয় দিবসের উপহার। এখন কৃষি ও কৃষি বিপণন ক্ষেত্রে সু-শাসন কায়েম করতে হবে। বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাজারে সুশাসন আনা আমাদের দায়িত্ব।