কনকনে শীত আর শৈত্য প্রবাহের ঠান্ডা বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে টঙ্গীতে ইজতেমামুখী মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম বৃহৎ এ ধর্মীয় জমায়েত ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে। শুক্রবার বাদ ফজর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার কাথা ছিল। বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বী মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা বয়ান শুরু করেন। এর বাংলায় তরজমা করেন হাফেজ মাওলানা জুবায়ের। আর এ বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক দফা থেমে থেধমে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হলেও মুসল্লিারা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করেন নি। বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে পুরো ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ইজতেমা ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা ইজতেমার ময়দানের পাশের রাস্তা ও ফুটপাথগুলোতে পলিথিনে সামিয়ানা টানিয়ে তার নিচেই অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া কামারপাড়া রোডসহ ইজতেমার সকল সড়কে ফুটপাতে মুসল্লিরা বিছানা পেতে বসে পড়েন। তবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ইজতেমামুখী মানুষের ¯্রােত অব্যাহত ছিল।

বিশ^ ইজতেমার মুরুব্বী মেজবাহ উদ্দিন জানান, চাঁদের হিসেবে বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে অর্থাৎ এ দিন সূর্য ডোবার পর থেকেই শুক্রবার গণণা শুরু হয়ে গেছে। তাই তারা এসময় থেকেই আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের ইজতেমা শুরু করা হয়েছে।

ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা : গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃংখলা জোরদার করা হয়েছে। ৫সেক্টরে ভাগ করে ৫স্তুরের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি স্তর বা সেক্টরের দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকেই দু’পর্বের ইজতেমায় পুলিশ, র‌্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ ৮ হাজার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৪ শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের করা হয়েছে। ২০টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হচ্ছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরাগুলো। এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, বাইনোকুলার, নাইটভিশন গগল্স, পুলিশ ও র‌্যাবের ষ্ট্রাইকিং ফোর্স, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, নৌ টহল, হেলিকপ্টার টহল, মুসলিল্লদের খিত্তাওয়ারী মোটরসাইকেল টহল ও বিশেষ নিরাপত্তা যন্ত্র আর্চওয়ে। প্রতিটি খিত্তায় বিশেষ টুপি পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান করবেন। তারা কোন প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতার ইঙ্গিত পেলে বিশেষ সিগনালের মাধ্যমে সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের তৎক্ষণিক অবহিত করবেন। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে ১৫টি ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, ১১টি চেক পোষ্ট, হেলিকপ্টার উঠা-নামার জন্য ২টি পয়েন্টে হ্যালিপ্যাড ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং এর জন্য একটি প্রধান কন্ট্রোল রুম ও ৮টি সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও তারা ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে প্রত্যক্ষ করার জন্য ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের স্ক্রিনে সার্বক্ষনিক নজর রাখবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র‌্যাবের ১০টি ও পুলিশের ১৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষনিক বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পর্যবেক্ষণ করবেন।

রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি। ইজতেমায় অংশ নিতে বুধবার থেকেই মুসল্লিরা তুরাগতীরে আসতে শুরু করেছেন। বৃহ¯পতিবার মুসল্লিদের ঢল আরও বাড়তে থাকে। ইজতেমায় অংশ নিতে ট্রেন, নৌকা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে হাজারো মুসল্লি ইজতেমা মাঠে সমবেত হচ্ছেন। তাঁরা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার মুসল্লিদের উদ্দেশে প্রস্তুতিমূলক বয়ান দেয়া হয়। এতে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের তিন দিন অবস্থানের নিয়মকানুন সম্পর্কে বলা হয়।

শুক্রবার বৃহত্তর জুমার নামাজ ঃ বিশ^ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বী প্রকৌশলী মো. মাহফুজু জানান, শুক্রবার দেশের সর্ব বৃহৎ জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের। এতে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এ বৃহৎ জুম্মার নামাজে শরিক হবেন। ইতেমধ্যে অনেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আত্মীয় স্বজনের বাসায় অবস্থান নিচ্ছেন।

দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি দূর-দূরান্ত থেকে চলে আসায় ইতোমধ্যে টঙ্গী স্টেশন রোড ও কামারপাড়াসহ বিশ্বইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকায় মুসল্লিদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। জুমার নামাজে কে ইমামতি করবেন তা জানা যায়নি।

ইজতেমা মাঠের মুরব্বিরা জানান, তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠের সব কাজ করা হচ্ছে পরামর্শের মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলীগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।

সিরাজগঞ্জের কাজিপাড়া এলাকা থেকে আগত মো. কেফাতুল্লা জানান, মাঠে স্থান না পেয়ে কামারপাড়া সড়কের ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছি। বৃষ্টি-কুয়াষা থেকে রক্ষা পেতে উপরে পলিথিন টানিয়ে দিয়েছি। আমরা ইজতেমা ময়দানে এসেছি ধর্মের কাজে। মুরুব্বীদের ধর্মীয় বয়ান শুনছি। আল্লাহকে রাজি-খুশি করে চলব। নিজের ইমান ও আমলকে দ্বীনের পথে মেহনতের জন্য তৈরী করতে এসেছি।

প্রথম দফায় ৬৪ জেলার মুসল্লিরা ৮৭ খিত্তায় ঃ বিশ্ব ইজতেমার মাঠে প্রতিজেলার মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারিত থাকে। এ স্থানকে খিত্তা বলে। প্রথম দফায় অংশগ্রহণকারী ৬৪ জেলার মুসল্লিরা নিজ নজি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন।

বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বী ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত হতে দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা ময়দানে এসে ইজতেমায় যোগ দেয়া শুরু করেন। বিদেশীরা ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে তাদের জন্য উন্নত তাবুতে এসে অবস্থান নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কয়েক’শ বিদেশী মেহমান এসে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি একই সময়ে দেশের সব জেলা থেকে আসা মুসল্লিরা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে হাজির হচ্ছেন।

আয়োজকরা জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে সভাপতিহীন বিশ্বইজতেমার এতো বড় আয়োজন প্রতিবছরই অত্যন্ত সু-শৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করা হয়। এজন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। পুরো ইজতেমা ময়দানকে মুরুব্বীদের পরামর্শে সাজানো হয়। ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান, রান্না-বান্না করার স্থান, টয়লেট, অজুখানা, গোসলখানা সবই সুনিদিষ্ট করা থাকে।

সকালে ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে র‌্যাব ও পুলিশ পৃথক ব্রিফিং প্রদান করেন ব্রিফিংকালে জানানো হয়, মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘœতা বিধানের জন্য টঙ্গী বিশ্বইজতেমা এলাকায় প্রায় সাড়ে আট হাজার পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা আট ভাগে ভাগ হয়ে পাঁচস্তরে মুসল্লিদের নিরাপত্তা রক্ষার কাজ করবে। মুসল্লিদের প্রবেশ পথে সন্দেহভাজনদের মেটাল ডিটেক্টর, ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরা থেকে পুরো ইজতেমাস্থল পর্যবেক্ষণ করা হবে। সাদা পোশাকে প্রতি খিত্তায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদেরও নজরদারি করা হবে। রবিবার থেকে ইজতেমার শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাজীপুরের পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ইজতেমা ময়দানগামী সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের ১৮শ সদস্য দায়িত্বপালন করবেন। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদাভাবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কন্টোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

গাজীপুরে মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিং ঃ গাজীপুর জেলা তথ্য অফিসার জালাল উদ্দিন জানান, ইজতেমা চলাকালীন সময় জয়দেবপুর চান্দনা-চৌরাস্তা হয়ে আগত মুসুল্লীদের বহনকারী যানবাহনের জন্য টঙ্গীস্থ কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস কম্পাউন্ড, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের সামনের রাস্তার উভয় পাশে,সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি মাঠ প্রাঙ্গন, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমির মাঠের উত্তরে টিআইসি মাঠ, জয়দেবপুর থানাধীন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠ, চান্দনা-চৌরাস্তা হাইস্কুল মাঠ, জয়দেবপুর চান্দনা-চৌরাস্তা ট্রাক স্ট্যান্ড এবং নরসিংদী-কালীগঞ্জ হয়ে আগত মুসল্লি বহণকারী যানবাহন টঙ্গীস্থ কে-টু নেভী), সিগারেট ফ্যাক্টরী সংলগ্ন খোলা জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইজতেমায় চিকিৎসা সেবাঃ মুসল্লিদের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করতে গাজীপুরের ইজতেমায় দায়িত্বপালনকারী পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ খায়রুজ্জামান জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে ৫টি বিশেষজ্ঞ টিম মুসল্লিদের চিকিৎসা দেবেন। এ গুলো হচ্ছে বক্ষ ব্যাধি, হৃদরোগ, পঙ্গু হাসপাতাল, বার্ণ ইউনিট ও ন্যাশনাল আই কেয়ার ইউনিট। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু গেইট, এটলাস গেইট, বাটা কারাখানার গেইট, বিদেশী মেহমান খানা ও তুরাগের পশ্চিম তীরে আরো ২টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসকের বক্তব্যঃ গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন গাজীপুর, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকান্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে। বিদেশী মেহমানগণের আবাসস্থল নির্মাণের নির্মিত্তে টিন সরবরাহ, বিভিন্ন দফতরের কন্ট্রোলরুমের স্থান নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে থকে। সর্বপরি বিশ্ব ইজতেমার সকল দিকটি জেলা প্রশাসন পর্যবেক্ষণ করে।

সিটি কর্পোরশেনের পরিচ্ছন্নতা অভিযানঃ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের ওযু, পয়:নিষ্কাষণ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য লক্ষ্য ইজতেমা মাঠে স্থাপিত ১৩টি গভীর নলকূপ দ্বারা ১৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটিার পাইপ লাইনের মাধ্যেমে প্রতিদিন ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ গ্যালন সুপেয় পানি সরববরাহ নিশ্চিত করা হবে। ইজতেমা চলাকালীন ২১টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত বর্জ্য অপসারণ করা হবে। বিশ্ব ইজতেমার উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার সিনেমা হল সমূহ বন্ধ এবং দেয়ালের অশ্লীল পোষ্টার অপসারণ করা হয়েছে।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ঃ টঙ্গীর মন্নু নগর এলাকায় বিশ্বইজতেমায় মুসল্লিদের জন্য হামদর্দ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিভিল সার্জন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ইউনানী হারবাল মেডিক্যাল সোসাইটি, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, ইবনে সিনা, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন’র ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প বৃহস্পতিবার মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠান্ডা, পেটের পীড়া জনিত রোগে আক্রান্ত।

ভ্রাম্যমান আদালত শুরু ঃ বিশ্ব ইজতেমায় ম্যাজিস্ট্রিয়াল দায়িত্বপালনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনগত নির্দেশনা প্রদান ও এলাকায় প্রতিদিন গাজীপুর জেলা প্রশাসন কর্তৃক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে আইনগত দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুমে গাজীপুর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ভ্রাম্যমান আদালতের দ্বায়িত্বপালন করবেন।

সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহঃ ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিড থেকে ১১ কেভির ৫টি ফিডারের মাধ্যমে ইজতেমা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এছাড়া ৪টি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং ৫টি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমারও রাখা হবে। ইজতেমা এলাকায় ৫টি অস্থায়ী বিদ্যুৎ ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। ৮টি পয়েন্টে প্রয়োজনীয় টুলসসহ লাইন ক্রু দল নিয়োজিত থাকবে। এতে অন্তত ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।

বিদেশী মেহমান : প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রায় শতাধিক দেশের বিদেশী মুসল্লি আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিদেশী মেহমানদের মধ্যে যারা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে চার চিল্লায় ছিলেন তাদের বেশীর ভাগই ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশের পথে রয়েছেন। তারা আজকের মধ্যে তারা ইজতেমা ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নিবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৩৮টি দেশের সাড়ে চারশত বিদেশী মেহমান এসেছেন।

বিআরটিসি’র বাস সার্ভিস ঃ বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে এ বছরও বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ট্রেনঃ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ইজতেমা চলাকালে বিশেষ ট্রেন চালু হবে এবং প্রতিটি ট্রেন টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে পাঁচ মিনিট করে যাত্রা বিরতি করবে। দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব পর্যন্ত ঢাকা অভিমুখী সকল ট্রেন টঙ্গী রেল স্টেশনে পাঁচ মিনিট বিরতি দেবে। আখেরি মোনাজাতের পরের দিন টিকেটধারী মুসল্লিরা যাতে উঠতে পারেন সে জন্য আন্তঃনগর ট্রেন গুলি টঙ্গী স্টেশনে বিরতি দেবে।

বাংলাদেশে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৯৬৩ সাল থেকে। জানুয়ারির ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইজতেমা হবে ৫৫তম। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইজতেমা তিন দিন ধরে অনুষ্ঠিত হতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা এই ইজতেমায় অংশ নেন বলে এটি বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে দুই দফায় তিন দিন করে ইজতেমার আয়োজন করা হতো। তাবলিগের আমির মাওলানা সা’দ কান্ধলভী ও মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীর বিরোধের কারণে গত বছর থেকে দুই পক্ষ আলাদাভাবে ইজতেমার আয়োজন করতে শুরু করে।