টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রান মুসলমানের কন্ঠে আমিন আল্লাহুমা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হলো এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহ্ ভিক্ষা করছিলেন মুসুল্লীরা। ক্ষমা লাভের আশায় লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনা করা হয় তাবলিগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতে। এরআগে হেদায়েতী বয়ান করা হয়। মাওলানা জোবায়ের অনুসারী প্রথম পর্বের পর দ্বিতীয় পর্বের এজতেমা হবে আগামী ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। রবিার আখেরী মোনাজাতের আগে আগামী বছর (২০২১ সালে) জোবায়ের অনুসারীদের এজতেমা দু’পর্বে আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের তাবলীগ মারকাজের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আহমদ ছোট ছোট বাক্যে আরবী-উর্দু ও বাংলা ভাষায় ৩৯ মিনিট ব্যাপী আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন। এবারের বিশ্ব এজতেমার এ পর্বের আখেরী মোনাজাত পরিচালনার দায়িত্ব পরে তার উপর। তিনি বেলা ১১টা ০৭ মিনিট থেকে মোনাজাত শুরু করেন এবং তা চলে বেলা ১১টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত। ৩৯ মিনিট ব্যাপী মোনাজাতের মধ্যে প্রথম ১৮মিনিট পবিত্র কোরআনের আরবী আয়াত এবং পরের ২১ মিনিট বাংলা ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোনাজাত শুরু হতেই পুরো এলাকা জুড়ে নেমে আসে পিন পতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। খানিক পর পর শুধু ভেসে আসে আমিন, ছুম্মা আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন। অনুতপ্ত মানুষের কান্নার আওয়াজে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে অনুনয়-বিনয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে পানাহ ভিক্ষা করছিলেন তাঁরা। ক্ষমা লাভের আশায় ধনী-গরীব-শ্রমিক-মালিক নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনার মধ্য দিয়ে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে রবিবার। এবারের প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে সংশি¬ষ্ট সূত্রের ধারণা।

এদিকে, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার ভোর রাত থেকেই টঙ্গীর এজতেমা অভিমুখে শুরু হয় মানুষের ঢল। টঙ্গীর পথে শনিবার মধ্যরাত থেকেই এজতেমা ময়দানগামী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোটর গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মোনাজাতে অংশ নিতে চার দিক থেকে লাখ লাখ মুসুল্লী পায়ে হেঁটেই এজতেমাস্থলে পৌঁছেন। মোনাজাতের আগেই এজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ায় মুসুল্লীরা মাঠের আশে-পাশের রাস্তা,অলি-গলিতে অবস্থান নেন। এজতেমাস্থলে পৌঁছুতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামার পাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোনাজাতের জন্য পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়াও পাশ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসুল্লীরা অবস্থান নেন। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ আর মানুষ। এজতেমাস্থলের চারপাশের ৪-৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আখেরি মোনাজাতের জন্য রবিবার আশে-পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।

এবারের বিশ্ব এজতেমা আয়োজনে এবং মুসল্লীদের সেবায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এজতেমা ময়দান ও এর আশপাশ এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেন। টঙ্গীর সড়ক দ্বীপগুলোতে ইসলামিক ভাবধারায় ২৫টি তোরন নির্মান করে মুসল্লীদের স্বাগত জানানো হয়। প্রায় ৬ হাজার এলইডি লাইটের আলোয় রাতের এজতেমা ময়দান ও এর আশপাশ এলাকা ছিল দৃষ্টিনন্দনে ভরপুর। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এ প্রসঙ্গে জানান, দেশী বিদেশী মুসল্লীদের কাছে বর্তমান সরকারের এজতেমার ব্যাপক আয়োজন ফুটিয়ে তুলতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

শেষ দিনে বয়ানকারী ॥ রবিবার আখেরী মোনাজাতের দিন বাদ ফজর থেকে খাস বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা রবিউল হক। এরপর মোনাজাত পরিচালনার আগে বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান তাবলিগের গুরুত্ব তুলে ধরে মুসুল্লীদের উদ্দেশ্যে হেদায়তি বয়ান করেন। এসময় এজতেমাস্থলে আগতরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সেসব বয়ান শুনেন।

ভিআইপিদের মোনাজাতে অংশ গ্রহণ ॥ বিশ্ব এজতেমার মূল আকর্ষণ হচ্ছে আখেরি মোনাজাত। প্রতিবারের মতো এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা গণভবনে মন্ত্রী পরিষদের বিভিন্ন সদস্যবর্গ, সাংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাসহ বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ অংশ গ্রহণ করেছেন। তারা টেলিভিশনের সামনে বসে সরাসরি সম্প্রচার দেখে মোনাজাতে অংশ নেন। এদিকে বিশ্ব এজতেমায় আগত লাখো লাখো মুসল্লির সঙ্গে এজতেমা ময়দানে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও আখেরী মোনাজাতে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের কূটনীতিক বৃন্দ, বিভিন্ন রাজনেতিক দলের নেতৃবর্গ শরিক হন। এ ছাড়া পদস্থ সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দল-মত, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন।

মোনাজাত শেষে বিষ্ময়কর মানব, যানজট ॥ মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া লক্ষাধিক মানুষ ভীড় ঠেলে একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। এতে এজতেমা ময়দান এলাকার কামারপাড়া রোডে সৃষ্টি হয় বিষ্ময়কর দীর্ঘ মানবজট। এজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকা হতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া লাখ লাখ মুসুল্লীর প্রচন্ড ভীড়ের কারনে এজতেমা ময়দান এলাকার কামারপাড়া সড়কের দু’পাশের সংযোগ মোড়ে মানব জটের সৃষ্টি হয়। বিষ্ময়কর এ মানব জটে আটকা পড়ে মুসুল্লীদের ভীড়ের মাঝে দীর্ঘ সময় একইস্থানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মানব জট ছাড়াতে হিমসিম খেতে হয়। এসময় অনেকের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন মালামাল খোয়া যায় এবং কয়েকজন আহত হয়। পরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য সেখানে পৌছে দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর মানবজট ছাড়াতে সামর্থ হন।

প্রায় একই কারণে টঙ্গীর এজতেমা ময়দানের আশে-পাশের সড়ক-মহাসড়ক গুলোতে সৃষ্টি হয় যানজট। ফলে যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক মুসল্লী এজতেমা ময়দান থেকে বের হয়ে পায়ে হেটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আর পাঁয়ে হাঁটা মুসুল্লীদের চাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসুল্লীদের যানবাহন রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থাকে এজতেমা মাঠের আশে-পাশের এলাকায়।

আগামী বছর জোবায়ের অনুসারীদের এজতেমা দু’পর্বে ॥ ২০২১ সালে মাওলানা জোবায়ের অনুসারী আলেম ওলেমা কওমীপন্থী তাবলীগ অনুসারীদের বিশ্ব এজতেমা দু’পর্বে আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব এজতেমার মুরুব্বী ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, এবারের বিশ্ব এজতেমায় অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৩০ লক্ষাধিক মুসুল্লীর সমাগম ঘটে। স্থান সংকুলানের কারণে মুসুল্লীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ২০২১ সাল হতে কওমীপন্থী তাবলীগ অনুসারীদের বিশ্ব এজতেমা দু’পর্বে আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রবিবার তাবলীগের মুরুব্বীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব ৮ হতে ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ১৫ হতে ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, মাওলানা জোবায়ের অনুসারী আলেম ওলেমা কওমীপন্থী এবং মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তাবলীগ অনুসারীদের মতবিরোধের কারণে গত বছরের ন্যায় এবারের বিশ্ব এজতেমাও দু’পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের প্রথমপর্বে মাওলানা জোবায়ের অনুসারীগণ তিনদিন ব্যাপী এজতেমায় অংশ নেন। রবিবার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এ পর্ব সমাপ্ত হয়। কওমীপন্থী তাবলীগ অনুসারীদের প্রথম পর্বের এজতেমা রবিবার শেষ হওয়ার পর ১৭ জানুয়ারি হতে দ্বিতীয় ধাপের তিনদিন ব্যাপী এজতেমায় মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তাবলীগ অনুসারীরা অংশ নিবেন। সোমবার মাগরিবের পূর্বে জোবায়ের অনুসারীরা ময়দান ত্যাগ করবেন এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে ময়দানের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। এরপর মাওলানা সা’দ অনুসারীরা ময়দানের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে গ্রহণ করে ময়দানে প্রবেশ করবেন এবং দ্বিতীয় পর্বের এজতেমার জন্য প্রস্তুতি নিবেন।

আরো চার মুসুল্লীর মৃত্যু ॥ রবিবার আখেরী মোনাজাতের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্ব এজতেমায় প্রথম পর্বে যোগ দিতে আসা ৪ মুসল্লি হৃদরোগ ও বার্ধক্য জনিত কারণে এজতেমা ময়দানে মারা গেছেন। এনিয়ে এবারের বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে মোট ১২জন মুসুল্লী মারা গেছেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মনজুর রহমান জানান, রবিার ভোর রাতে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার করাচিপাড়া এলাকার মৃত অচিম আলীর ছেলে আলী আহমেদ (৭৪), জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার হাটখোলা এলাকার জসিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মোমেন (৫৫) ও কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থানার গুচিহাটা এলাকার নুরুল ইসলাম (৮০) মারা যান। এছাড়াও এজতেমায় আসার পথে শনিবার রাতে টঙ্গীর চেরাগআলী কলেজ গেইট এলাকায় নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার বিলজুরা এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে মাজহারুল ইসলাম (১৭) সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন।

টঙ্গীর সকল কারখানায় ছুটি ॥ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর ও টঙ্গীর সকল কারখানায় ছুটি ছিল। ফলে এবার এসব কারখানার শ্রমিকদের ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সমস্যা হয়নি।

টেলিভিশন-মুঠোফোন ও ওয়্যারলেস সেটে মোনাজাত ॥ এজতেমা মাঠে না এসেও মোনাজাতের সময় হাত তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। টঙ্গীর এজতেমাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে কনফারেন্সের মাধ্যমে গত কয়েকবারের মতো এবারও গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদের মাইকে আখেরী মোনাজাত সম্প্রচার করা হয়। এখানে কয়েক হাজার নারী পুরুষ ঈদগাহ মাঠে এবং পার্শ্ববর্তী সড়কে ও ভবন গুলোতে জড়ো হয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। এছাড়াও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় টেলিভিশন, ওয়্যালেস সেট ও মুঠোফোনের মাধ্যমে মোনাজাত প্রচার করা হয়। এসব স্থানেও পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। আবার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করার কারনে অনেকে বাসায় বসে মোনাজাতে অংশ নিয়েছে। আবার দেশ বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকে ইজতেমাস্থলে অবস্থানকারীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেও মোনাজাতে শরীক হয়েছেন।

মুসল্লিদের জন্য ট্রেন ও শাটল বাস ॥ আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে এজতেমা ময়দানে যেতে ও মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য গাজীপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন শনিবার মধ্যরাত হতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং কালীগঞ্জ সড়কের মীরের বাজার হতে কামারপাড়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে ওই এলাকায় মুসল্লীদের সুবিধার্থে ময়দানমুখী শাটল বাস চলাচল করেছে। আখেরী মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা এ শাটল বাসে যাতায়ত করে। মোনাজাত শেষে টঙ্গী থেকে সবার বাড়ি ফেরার সুবিধার জন্য বেশ কয়েকটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ।

প্রথম পর্বে প্রায় তিনহাজার জামাত তৈরী ॥ বিশ্ব এজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, বিভিন্ন দেশে তাবলীগের কাজে বের হতে এবার এজতেমা স্থলে প্রথম পর্বে দু’সহ¯্রাধিক জামাত তৈরী হয়েছে। এরমধ্যে দেশীয় জামাত হয়েছে প্রায় দু’হাজার এবং প্রায় ৮শ’ বিদেশী জামাত হয়েছে। এসব জামাতে কেউ কেউ এক চিল্লা, দু’চিল্লা, তিন চিল্লা, ছয় চিল্লা ও একবছরের চিল্লা এমনকি আজীবন চিল্লার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। আগামি ১৫-২০ দিনে মধ্যে এসব জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে।

বিদেশী মুসুল্লী ॥ রবিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, চাঁদ, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্থান, খিরগিজস্থান, মালয়েশিয়া, মরক্কো, নেপাল, কেনিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, জর্দান ও দুবাইসহ বিশে^র ৭১টি দেশের দু’হাজার ৪১জন বিদেশী মুসল্লী অংশ নেন। তা’ছাড়া এপর্বে দেশের ৬৪টি জেলার কয়েক লাখ মূসল্লীরা এজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরে জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম।

মোনাজাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ ॥ আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মহিলা মুসল্ল¬ীও আগের দিন রাত থেকে এজতেমা ময়দানের আশেপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গী