পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রধানমনন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ব্যাপক সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য দেশজুড়ে ভোটের আয়োজনের প্রস্তাব দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বার্ষিক স্টেট অফ দ্য নেশনে প্রেসিডেন্টর বক্তৃতা দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ। বুধবার (১৫জানুয়ারি) মেদভেদেভ ঘোষণা করেন, তিনি এবং তার সরকার পদত্যাগ করেছেন। সরকারের কার্যক্রমে তিনি সন্তুষ্ট।

পদত্যাগ গ্রহণ করে নতুন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত মন্ত্রীদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ব্যাপক সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য দেশজুড়ে ভোটের আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন পুতিন। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তি নির্বাচনে পার্লামেন্টকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

দ্য মস্কো টাইমস বলছে, এই সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রস্তাবে ইঙ্গিত মিলেছে, তিনি ভবিষ্যতে প্রমানমন্ত্রীর পদে আসছেন। এতে ক্ষমতা প্রেসিডেন্সি থেকে পার্লামেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে চলে যাবে। ফলে ক্রেমলিন ছাড়ার পর নিজের শাসনের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ পাবেন তিনি। প্রেসিডেন্ট পুতিনের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলা হয় মেদভেদেভকে। ২০১২ সাল থেকে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এছাড়া ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

মেদভেদেভকে তার দায়িত্ব পালনের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিন ধন্যবাদ জানালেও তার মন্ত্রিসভা অভিষ্ট লক্ষ্যে পুরোপুরি পৌঁছাতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্টশিয়াল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডেপুটি হিসেবে তাকে দায়িত্ব দিতে পারেন পুতিন। ১৯৯৯ সাল থেকে কখনও প্রেসিডেন্ট কখনও প্রধানমন্ত্রী হিসেব দেশের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, টানা দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকা যায় না। একারণে তিনি দুইবার প্রেসিডেন্ট থাকার পর প্রধানমন্ত্রী হন। পরে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ৬৭ বছর বয়সী পুতিন।

রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রথা অনুযায়ী, বছর শেষে দেশটির নেতারা এক সংবাদ সম্মেলন করেন। ১৯৯৯ সালে তত্কালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিসন পুতিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। অনেক রুশ তখন জানত না কে এই পুতিন। কয়েক মাস পর ইয়েলিসন অনেকটা নাটকীয়ভাবে পুতিনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করেন। তারপর প্রায় দুই দশক ধরে পুতিন রাশিয়ার নেতা।

২০২৪ সালে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া পুতিনের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা না থাকা নিয়ে খোদ রাশিয়া এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা রকম গুঞ্জন চলছে। পুতিন ইঙ্গিত দিলেন, তিনি সংবিধানের একটি ধারা থেকে ‘ধারাবাহিক’ শব্দটি সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে, যাতে করে কেউ দুই মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন।

এদিকে পুতিনের সমালোচকরা দাবি করছেন, ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেই এই পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।