টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি লাভের আশায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে দুই হাত তুলে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আমিন, আল্লাহুমা আমিন, ছুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হয়েছে তাবলীগ জামাতের এবারের ৫৫তম বিশ্ব এজতেমা। মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নিজ নিজ গুনাহমাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য কেঁদে বুক ভাসান। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কামনা করা হয়। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। এজতেমার এ পর্বে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারীরা অংশ নেন। আখেরী মোনাজাত শুরুর আগে মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের মতো সা’দ অনুসারীদের আগামী ৫৬তম বিশ্ব এজতেমা দু’পর্বে অনুষ্ঠাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের নিজামুদ্দিন মার্কাসের হযরত মাওলানা জমশেদ রবিবারের এ মোনাজাত পরিচালনা করেন। তিনি বেলা ১১টা ৪৯ মিনিট থেকে ১২টা ০৬ মিনিট পর্যন্ত ১৭ মিনিট স্থায়ী মোনাজাত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াত এবং উর্দু ভাষায় পরিচালনা করেন। তাৎপর্যপূর্ণ এই আখেরি মোনাজাতে জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তি, আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। মোবাইল ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু ছিল বন্ধ।

রবিবার আখেরী মোনাজাতে শরীক হতে সূর্য উদোয়ের পুর্ব থেকে শুরু হয় এজতেমা মুখী ধনী দরিদ্র যুবক বৃদ্ধ নির্বিশেষে লাখো মানুষের ঢল। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে মুসল্লিরা ধাবিত হয় এজতেমা ময়দানে। সকাল ৯টার আগেই এজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। এজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। রবিবার ভোর থেকেই ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়াও পাশ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস- দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ। সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন শুরু হবে সেই কাঙ্খিত আখেরি মোনাজাত। আখেরি মোনাজাতের জন্য রবিবার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।

যারা বয়ান করলেন ॥
মোনাজাতের আগে চলে হেদায়তি বয়ান। রবিবার সকাল ৯টার পর থেকে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তাবলিগের গুরুত্ব তুলে ধরে হেদায়েতি (দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি) বয়ান করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের নিজামুদ্দিন মার্কাসের হযরত মাওলানা জমশেদ। এসময় তার বয়ানের বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী। হেদায়েতি বয়ান শেষে মাওলানা জমশেদ আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন। এর আগে বাদ ফজর থেকে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইকবাল হাফিজ। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম।

বয়ানে যা বলা হয়েছে ॥
বয়ানে মাওলানা জমশেদ বলেন, আল্লাহর গজবের বড় স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। তিনি আল্লাহর রাস্তায় তাবলীগে দাওয়াতি কাজে পায়ে হেঁটে মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ পায়ে হেঁটে বেশি মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া সম্ভব হবে। এতে পায়ে যে ধূলাবালি লাগবে তা জাহান্নামের আগুনকে ঠান্ডা করে দেয়। তিনি তাবলিগের দাওয়াতি কাজে গিয়ে মানুষের কাছে ইহজগতের জন্য ছওয়াল করতে বারণ করে বলেন, যে জামাত ছওয়াল করে আল¬াহর সাহায্যের দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ছওয়াল করলে দিলে শয়তান স্থান পায়। দাওয়াতি কাজে সবচেয়ে বড় কাজ হলো নিজের নিয়তকে সহি করা এবং অন্যের কাছে ছওয়াল না করা।
হেদায়েতি বয়ানে আরো বলা হয়, যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামের বিধান আনুসারে চলবে এবং হযরত মোহাম্মদ (সাং) এর জীবনাদর্শ অনুসরন করবে, সে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াব অর্জন করবে। নামাজের আগে আমাদের দিলে একিন বা ঈমান পয়দা করতে হবে। তা না হলে নামাজের ফজিলত পাওয়া যাবেনা।

পরবর্তী বিশ^ এজতেমার তারিখ ঘোষণা ॥
তাবলীগ জামাতের মাওলানা জোবায়ের অনুসারী আলেম ওলেমা কওমীপন্থী এবং মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তাবলীগ অনুসারীদের মতবিরোধের কারণে গত বছরের ন্যায় এবারের ৫৫তম বিশ্ব এজতেমাও দু’পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ হতে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এ বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এতে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারীরা অংশ নেন। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের আগে এজতেমার বয়ান মঞ্চ থেকে আগামি ৫৬তম বিশ^ এজতেমার পৃথক সময়ে দুই পর্বের তারিখ ঘোষণা করা হয়। সা’দ অনুসারিদের এজতেমা আয়োজক কমিটির শুরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ তারিখ ঘোষণা করা হয় বলে জানান এজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মোঃ সায়েম। ঘোষাণা অনুযায়ি চলতি বছরের আগামি ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর প্রথম পর্ব এবং ২০২১ সালের ১, ২ ও ৩ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও আগামি ১৩ থেকে ১৭ নবেম্বর পর্যন্ত এজতেমা ময়দানে সা’দ অনসুসারিদের পাঁচ দিনের জোড় এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে, গত ১০-১২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এবারের ৫৫তম বিশ্ব এজতেমার প্রথমপর্ব। এ পর্বে মাওলানা জোবায়ের অনুসারীগণ অংশ নেন। ১২ জানুয়ারি এজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শুরুর পূর্বে মাওলানা জোবায়ের অনুসারীগণের ৫৬তম বিশ^ এজতেমার পৃথক সময়ে দুই পর্বের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ঘোষাণা অনুযায়ি ৫৬তম বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব ২০২১ সালের ৮,৯ ও ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব একই বছরের ১৫, ১৬ ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও ২০২০ সালের ২৫ নবেম্বও থেকে এজতেমা ময়দানে পাঁচ দিনের জোড় এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ব এজতেমার ময়দানে দেশ-বিদেশের মুরব্বিদের পরামর্শ বৈঠকে (মাশওয়ারায়) আগামী বিশ্ব এজতেমা ও জোড় এজতেমার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।

বিশ্ব এজতেমার মুরুব্বীরা জানান, সাধারণত বিশ্ব এজতেমার কমপক্ষে ৪০ দিন আগে জোড় এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। জোড় এজতেমায় তাবলীগের সব সাথীরা অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। কমপক্ষে তিন চিল্লার সাথীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ জোড় এজতেমা। তিন চিল্লার সাথীদের মধ্য থেকে কিছু অংশ বিশ্ব এজতেমার আয়োজনে টঙ্গীর এজতেমার ময়দানে কাজে যোগদান করেন। স¤পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এজতেমা ময়দানের যাবতীয় কাজ স¤পন্ন করেন তারা। আর বাকী সাথীরা বিশ্ব এজতেমার দাওয়াত নিয়ে ময়দানে বেরিয়ে পড়েন।

মাওলানা সা’দ কান্দলভিকে নিয়েই আগামী এজতেমা করতে চান তাঁর অনুসারীরা ॥
আগামী বছর থেকেই মাওলানা সা’দ কান্দলভিকে নিয়ে টঙ্গীর ময়দানে ৫৬তম বিশ্ব এজতেমা করতে চান তাঁর অনুসারীরা। এর আগেই উভয়পক্ষের বিরোধ মিটে যাবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শনিবার রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে এজতেমা ময়দানে আলাপকালে চট্রগ্রামের লালখান জমিয়াতুল উলুম আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মাওলানা সা’দ কান্ধলভির কিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে তিনি সেসব বক্তব্যের ব্যাপারে একটি সমাধানে পৌছানের পর আগামীতে টঙ্গী এজতেমায় তাঁর যোগদানের পথ সুগম হবে বলে মনে করছেন তাবলিগ সাথীরা। এদিকে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও গাজীপুর সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম পর্বের ন্যায় এজতেমার এ পর্বেও তাবলিগ জামাতের মুরব্বীদের সঙ্গে ময়দানে নিবিড়ভাবে সময় দিয়েছেন। রাত-দিন তারা ময়দানে মুরব্বীদের সঙ্গেই অবস্থান করেছেন। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম শনিবারও এজতেমা ময়দানে মুরব্বীদের সঙ্গে রাত কাটান।

এজতেমার মুরুব্বীদের বরাত দিয়ে তাবলীগ জমাতের নিজামউদ্দিন মারকাজের মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম জানান, আমাদের মতানৈক্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এজতেমা। ধীরে ধীরে এজতেমায় বিদেশী মুসল্লি আসা কমে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে এটি আর বিশ^ এজতেমা থাকবে না। তখন এটি বাংলাদেশের এজতেমায় পরিণত হবে। আগে যেখানে শতাধিক দেশ থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার বিদেশী মুসল্লি আসতো এখন দুই পর্বে মাত্র আসছেন পাঁচ হাজারের মতো মুসল্লি। তাই ঐক্যবদ্ধ এজতেমা খুব জরুরী।

এক পর্বে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠানে মেয়র জাহাঙ্গীরের উদ্যোগ ॥
এদিকে এজতেমার আখেরী মোনাজাত শেষে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জানান, দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখ লাখ মুসল্লীর খেদমতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে সফলভাবে এজতেমা সম্পন্ন করতে পেরেছে। এজন্য এজতেমায় যোগ দেয়া সকল মুসল্লী ও গাজীপুর সিটিবাসীকে ধন্যবাদ জানান। এজতেমায় আসা মুসল্লীদের মেহমানদারিত্বে আগামীতে আরো নতুন নতুন আয়োজন থাকবে বলে তিনি জানান। আগামী বছর জোবায়ের পন্থী এবং সা’দ পন্থীরা আলাদাভাবে দু’পর্ব করে ৪ পর্বে এজতেমা অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা সমঝোতার মাধ্যমে এক পর্বে আয়োজন করা যায় কিনা, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুই পক্ষের শীর্ষ মুরুব্বিদের সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে। তাদের মতবিরোধ মেটানোর প্রক্রিয়া চলছে, ভালো রেজাল্টও আছে। তাবলীগ অনুসারী মুসল্লীরাও কোন বিভেদে থাকতে চান না। মুরুব্বিরাও চান ইসলামের প্রচার এক মঞ্চ থেকেই হউক। তিনি বলেন, এক পর্বে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠানের বিষয়ে দুই পক্ষের মুরুব্বিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসার চিন্তাভাবনা চলছে।

ভিআইপিদের আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহণ ॥
এবারের বিশ^এজতেমার সর্বশেষ আখেরী মোনাজাতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগরের পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম প্রমূখ বিশ^ এজতেমায় অংশ নেন বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিনুর ইসলাম। এছাড়া এজতেমার বিদেশি নিবাসে ক্রিকেটার শাকিব আল হাসান, জোনায়েদ সিদ্দিকী, সোহরাওয়ার্দী শুভ, রাকিবুল হাসান, শাহরিয়ার নাফিজ প্রমূখ ক্রিকেটার বিশ^ এজতেমার শেষের আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন।

বিদেশীদের অংশগ্রহণ ॥
বিশ^ এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের (নিজামুদ্দিন মারকাজের) মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম জানান, ৫৯টি দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মুসল্লি যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, জর্ডান, আরব আমিরাত, ইথুয়িপিয়া, আফ্রিকা, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ইত্যাদি দেশ থেকে ওই মুসল্লিরা অংশ নেন।

আরো তিন মুসুল্লির মৃত্যু ॥
এবারের বিশ^ এজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে আসা আরো তিন মুসুল্লি মারা গেছেন। এদের মধ্যে শনিবার রাতে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার চাঁদপাড়া দূর্গাদাহ এলাকার মৃত মুজিবুর রহমানের ছেলে মোঃ শাহ আলম (৬৫) ও চুয়াযাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার খাদিমপুর এলাকার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ফজলুল হক (৬৮) এবং শনিবার সকালে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার আজিম নগর এলাকার মৃত মফিজুল ইসলামের ছেলে মোঃ মনির হোসেন (৪০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এনিয়ে এ পর্বে মোট ১০ মুসুল্লি মারা গেছেন। এর আগে প্রথমপর্বে ১৪জন মুসুল্লি মারা যান। জিএমপি’র উপ-কমিশনার মো. মনজুর রহমান জানান, এবারের ৫৫তম বিশ^ এজতেমার দুই পর্বে মোট ২৪ জন মুসল্লি মারা গেছেন। সড়ক দুর্ঘটনা, বার্ধক্য ও অসুস্থ্যজনিত কারণে এ ২৪জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।

মোনাজাত শেষে যানজট ও যানজট ॥
আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আশা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করে। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লি¬রা তাড়াহুড়া করতে শুরু করে। এতে টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাষ্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়ক গুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জনজট ও যানজট।

গাজীপুর ও টঙ্গীর সকল কারখানায় ছুটি ॥
বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর ও টঙ্গীর সকল কারখানায় ছুটি ছিল। ফলে এবার এসব কারখানার শ্রমিকদের এজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সমস্যা হয়নি।

টেলিভিশন-মুঠোফোন ও ওয়্যারলেস সেটে মোনাজাত ॥ এজতেমা মাঠে না এসেও মোনাজাতের সময় হাত তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। টঙ্গীর এজতেমাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে কনফারেন্সের মাধ্যমে গত কয়েকবারের মতো এবারও গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদের মাইকে আখেরী মোনাজাত সম্প্রচার করা হয়। এখানে কয়েক হাজার নারী পুরুষ ঈদগাহ মাঠে এবং পার্শ্ববর্তী সড়কে ও ভবন গুলোতে জড়ো হয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। এছাড়াও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় টেলিভিশন, ওয়্যালেস সেট ও মুঠোফোনের মাধ্যমে মোনাজাত প্রচার করা হয়। এসব স্থানেও পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। আবার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করার কারনে অনেকে বাসায় বসে মোনাজাতে অংশ নিয়েছে। আবার দেশ বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকে এজতেমাস্থলে অবস্থানকারীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেও মোনাজাতে শরীক হয়েছেন।