রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছে, জীবনে বড় হতে হলে কঠোর পরিশ্রম আর অনুশীলনের বিকল্প নেই। স্কাউটিংয়ের শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনে প্রতিফলন করা গেলে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরাণি¦ত হবে। স্কাউটিং একজন শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ার পাশাপাশি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়। স্কাউটিংকে দেশসেবা ও মানবিক কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। স্কাউটিংয়ের শিক্ষা ব্যাক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনে প্রতিফলিত করা গেলে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

তিনি বলেন, দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিনত করা এবং দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে জনগণকে ইতিবাচক, আধুনিক ও বিজ্ঞান মনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সামিল হতে হবে। স্কাউটিং কার্যক্রম পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক, প্রগতিশীল, সৃজনশীল হিসেবে গড়ে তুলতে এবং সমাজকে এগিয়ে নিতে।

রাষ্ট্রপতি ও চীফ স্কাউট আবদুল হামিদ সোমবার বিকেলে গাজীপুরে কালিয়াকৈরের মৌচাকে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাংলাদেশ স্কাউটস আয়োজিত ৯ম জাতীয় কাব ক্যা¤পুরি-২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি ছিল আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য। জাতির পিতার সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুর্নগঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ তাঁর পরিবারের আপনজনদের নৃশংস হত্যাকান্ডের ফলে দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। উত্থান ঘটে স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের। দেশে আজ মুক্তিযুদ্ধের পতাকাবাহী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০২১’ ‘ভিশন ২০৪১’ এবং শতবর্ষ মেয়াদী ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পণা ২১০০’ গ্রহণ করেছেন। জাতিসংঘ ‘টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ২০৩০’ অর্জনসহ ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা এসব মহাপরিকল্পনার উদ্দেশ্য।

তিনি স্কাউটদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামি দিনে তোমরাই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে। তোমরাই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, ধর্ম নিরপেক্ষ উন্নত- সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। সব সময় মনে রাখতে হবে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশ আমাদের। এ জন্য তোমাদের যোগ্য ও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। সমাজ সেবা, সমাজ উন্নয়নকর্মকান্ডে তোমরা সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। বন্যা, ঘূর্নিঝড়, ভবনধ্বস ও ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় উদ্ধার কাজে তথা জাতীয় দূর্যোগে স্কাউটদেরকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। আমি আশা করি মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিবাহ ও ধর্মন্ধতারোধসহ সামাজিক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে স্কাউটরা বরাবরের মতো নিজেদের সক্রিয় রাখবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের স্কাউট সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৯ লক্ষ থেকে ২১ লক্ষে উন্নীত করার উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। ২০২১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে ৩২তম এপিআর স্কাউট জাম্বুরী। আমি জেনে আনন্দিত হয়েছি যে, স্কাউট সদস্য সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ বিশ্ব স্কাউট সংস্থার ‘টপ ফাইভ কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘এপিআর সাসটেনেবল গ্রোথ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছে। এজন্য তিনি সকল পর্যায়ের স্কাউট ও স্কাউট নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানান।

রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, আগামি ১৭মার্চ মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের ঠিক আটদিন আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের কার্যক্রম শুরু হবে। চলবে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত। গোটাদেশ ব্যাপী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীরা গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাদের প্রিয় নেতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য। ঠিক এমনই সময়ে ক্যাম্পুরী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যা সকলের নিকট স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ৯ম জাতীয় কাব ক্যা¤পুরিতে অংশগ্রহণকারী স্কাউট গন নিজেদের উন্নয়নের পাশাপাশি পরোপকারি ও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গড়ে তুলবে। তাহলেই তোমারা সমাজের কাজ থেকে আরো ভালোবাসা পাবে এবং অন্যেরা তোমাদেরকে অনুসরণ করে স্কাউটিং এ উৎসাহিত হবে।

তিনি ক্যাম্পুরীতে অংশগ্রহণকারী দেশ-বিদেশের কাব স্কাউট ও স্কাউটদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ক্যাম্পুরী পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন রচনার পাশাপাশি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাকরি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক এমপি। বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খাঁন। অনুষ্ঠানে মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল সিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও চীফ স্কাউট ২০১৮ সালে স্কাউটদের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ এবং রোভার স্কাউটদের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড’ অর্জনকারীদের মধ্যে অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করেন।

এই কাব ক্যাম্পুরীতে (৬ থেকে ১০+ বয়সী) কাব স্কাউটরা দেশের বিভিন্ন জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন স্কুল, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও মুক্ত স্কাউট দলের কাব স্কাউট সদস্য। জেলা কন্টিনজেন্ট লিডারের নেতৃত্বে জেলা ভিত্তিক কাব লিডারদের নিয়ে কাব স্কাউটরা ক্যাম্পুরী ময়দানে এসেছে। কাব ক্যাম্পুরী হচ্ছে কাব স্কাউটদের বৃহত্তম মিলনমেলা। প্রতি ৪ বছর অন্তর বাংলাদেশ স্কাউটস এই মিলনমেলার আয়োজন করে থাকে।

এর আগে রাষ্ট্রপ্রতি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে তাকে স্কাউটের উর্ধতন কর্মকর্তারা অভ্যর্থনা জানান এবং ক্যা¤পুরী স্কার্ফ, ব্যাজ ও টুপি পড়িয়ে দেন। পরে তিনি কৃতি স্কাউটসদের মাঝে প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট ও প্রেসিডেন্ট রোভার স্কাউটস এওয়ার্ড প্রদান এবং ক্যা¤পুরী স্মারক ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন। তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে অংশগ্রহণকারী স্কাউটদের পরিবেশীত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং ক্যা¤পুরীর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আগামি ২৪ জানুয়ারি মহা তাঁবু জলসার মাধ্যমে এবারের কাব ক্যাম্পুরি শেষ হবে।