পাবনায় ধর্ষণ মামলায় পুলিশকে সহযোগিতা করতে গিয়ে উল্টো পুলিশের সামনে প্রতিপক্ষের হাতে আব্দুল আলীম (৩৬) নামের এক যুবককে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলার ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী যুবকের অভিযোগ, পুলিশ ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে তার ওপর হামলা হলেও তাকে রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। এদিকে, ঘটনায় জড়িত দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় ২২ ডিসেম্বর সদর থানায় মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যানসহ শরিফুল ইসলামসহ আটজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী ওই নারীর পরিবার। এই মামলা তদন্ত করতে গত ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গাছপাড়া বাজারে যান সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ও এক কনস্টেবল। সেখানে মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহণে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে স্থানীয় নুরপুর এলাকার আব্দুল আলীম নামের এক যুবক। গাছপাড়া বাজারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে আলীমসহ কয়েকজনের সাথে মামলার বিষয়ে কথা বলছিলেন পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম। এ সময় ধর্ষণ মামলার আসামী ইউপি চেয়ারম্যানপক্ষের আরিফ চেয়ারম্যানের ছোট ভাই), হেলাল, আশরাফসহ তাদের সহযোগিরা অতর্কিত আলীমের ওপর হামলা চালিয়ে এলোপাথারী মারপিট করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসাপাতালে ভর্তি করেন। হামলার ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলেচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ও কনস্টেবল। তারপরই আলীমকে মারধর শুরু করে হামলাকারীরা। বেশকিছু সময় তাকে লাঠিশোঠা, লোহার রড দিয়ে মেরে দুই পা ভেঙ্গে দেয় সন্ত্রাসীরা। পরে হামলায় আহত আলীমকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত আলীম জানান, ধর্ষণ মামলায় পুলিশকে সহযোগিতা করতে গিয়ে আমি হামলার শিকার হয়েছি। ওসি (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ধর্ষণ মামলায় স্বাক্ষী খুঁজে দিতে আমার সহযোগিতা চেয়েছিলেন। আমি তার কথায় সহযোগিতা করতে কয়েকজন স্বাক্ষীকে ডেকে নিয়ে ওইদিন বসে কথা বলছিলাম। এমন সময় আমার ওপর হামলা হয়। আলীম বলেন, আমার কষ্ট হলো, যার কথায় সহযোগিতা করতে এগিয়ে গেলাম, সেই পুলিশ কর্মকর্তা বা কেউ আমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন না।

আহত আলীমের স্ত্রী রুমা খাতুন জানান, পুলিশ অফিসার আমার স্বামীকে সহযোগিতা করার জন্য মোবাইলে ডেকে নিয়ে যান। কিন্তু তার উপস্থিতিতে হামলা হলো অথচ তিনি (পুলিশ কর্মকর্তা) কোনো ভূমিকা নিলেন না। রুমা খাতুন হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

এ বিষয়ে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম জানান, মামলার স্বাক্ষীর বিষয়ে কথা শেষ করে চলে আসার পর আলীমের ওপর হামলা হয়। কিছু দূরে যাওয়ার পর লোকজনের দৌড়াদৌড়ি দেখে তাৎক্ষনিক বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাই এবং আশপাশের মোবাইল টিমকে খবর দেই। পরে আহত আলীমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয় লোকজন। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ^াস জানান, ঘটনার পর অভিযানে নেমেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আহত যুবকের স্ত্রী রুমা খাতুন বাদি হয়ে দশজনকে আসামী করে সোমবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন। এরপর অভিযান চালিয়ে দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের তেজেম প্রামানিকের ছেলে আশররাফ হোসেন (৪৫) ও দারোগ আলীর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (৪২)। গৌতম কুমার বিশ^াস আরো জানান, এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি ছিল কিনা সেটি তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) শামীমা আক্তারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।