জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত’র (আইসিজে) অন্তর্বর্তী আদেশে বাংলাদেশ ও মানবতার জয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এটি মানবতার জন্য এক বিজয়, সব দেশের মানবাধিকারকর্মীদের জন্য এক মাইলফলক।’ ড. মোমেন আরও বলেন, ‘এটি গাম্বিয়া, ওআইসি, রোহিঙ্গা এবং অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য এক বিজয়। ‘মানবতা এবং মাদার অব হিউম্যানিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মঙ্গল হোক।’ বৃহস্পতিবার নেডারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগ শহরে আইসিজের আদেশের পর ইকুয়েডরে অবস্থানরত এক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

বৃহস্পতিবার গণহত্যা থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সুরক্ষায় নিজের ক্ষমতার ভেতর থেকে মিয়ানমারকে সব পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আদেশ দিয়েছেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। খবর রয়টার্স’র। এর আগে গত মাসে এক সপ্তাহের শুনানির সময় ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি আদালতকে মামলাটি বাদ দিতে অনুরোধ করেছিলেন। আদালত বলেছে, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতের আদেশ মিয়ানমারের জন্য মানা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া আদেশটি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়ার অনুরোধ সাপেক্ষে বেশ কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ মঞ্জুর করেন আদালত। গণহত্যা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার যে আবেদন গাম্বিয়া করেছে, তা যৌক্তিক বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।

আদালত বলেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না— সেই বিচারের এখতিয়ার জাতিসংঘের এই আদালতের রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশনের ভিত্তিতে এই মামলা করার মতো প্রাথমিক অধিকারও গাম্বিয়ার আছে।

এ বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার নেই বলে মিয়ানমার যে দাবি তুলেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এ বিচারপতি। সনদের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর আওতায় (ধারা ৮ ও ৯) এ মামলা দায়েরের গাম্বিয়ার প্রাইমা ফেসি অধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) সভাপতি বিচারপতি আবদুলকাউই আহমেদ ইউসুফ বলেন, ‘আইসিজির অভিমত হচ্ছে যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে এখনও অতিশয় অরক্ষিত অবস্থায় আছে।’

চারটি অস্থায়ী পদক্ষেপ সম্পর্কে আইসিজেতে করা আবেদনের সবগুলো ১৫ বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করে রায় দেয়। এতে আদেশ অনুযায়ী মিয়ানমার কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা চার মাসের মধ্যে দেশটিকে আদালতে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সাথে প্রতি ছয় মাস পরপর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

আদালতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় এবং মিয়ানমারের দাবি খারিজ করে দিয়ে তাদের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নৃশংসতা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্ব আদালতের এ রায়টি চূড়ান্ত। তবে বাস্তবিক হচ্ছে এটি কার্যকর করার কোনো উপায় নেই।