মিয়ানমার রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা চালিয়েছে, তার সব রকম আলামতই প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। গণহত্যা থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সুরক্ষায় নিজের ক্ষমতার ভেতর থেকে মিয়ানমারকে সব পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকরা। বৃহস্পতিবার (২৩ জানয়ারি) দ্য হেগ শহরে আদালতের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ এমন আদেশ দেন।

স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায়) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের আদেশ ঘোষণা শুরু করেন। এ সময় অপর ১৪ জন স্থায়ী বিচারপতি ও দুজন অ্যাডহক বিচারপতি আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালতের আদেশে বলা হয়, জেনোসাইড কনভেনশন ২ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের হত্যা, শারীরিক বা মানসিক নিপীড়ন কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা যাবে না।

এদিন মোট চারটি আদেশ দেয় আদালত। বাকি তিনটি আদেশ হলো:

গণহত্যা কিংবা গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ। মিয়ানমারকে অবশ্যই ৪ মাসের মধ্যে লিখিত জমা দিতে হবে যেন তারা সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে। এরপর প্রতি ৬ মাসের মধ্যে আবার প্রতিবেদন দেবে।

গাম্বিয়া এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারবে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়ার অনুরোধ সাপেক্ষে বেশ কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ মঞ্জুর করেন আদালত।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন চালানো হয়েছে, তার প্রমাণ সংরক্ষণ করতেও বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে গণহত্যা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার যে আবেদন গাম্বিয়া করেছে, তা যৌক্তিক বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।

আদালত বলেছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না— সেই বিচারের এখতিয়ার জাতিসংঘের এই আদালতের রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশনের ভিত্তিতে এই মামলা করার মত প্রাথমিক অধিকারও গাম্বিয়ার আছে।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা গণহত্যার শামিল বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। নেদারল্যান্ডসের হেগে ১৫ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আইসিজে এ মন্তব্য করেন।

সেখানে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা প্রদানের দায় অস্বীকার করতে পারে না মিয়ানমার। মিয়ানমার রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা চালিয়েছে, তার সব রকম আলামতই প্রমাণিত হয়েছে বলে অন্তর্বর্তী আদেশে জানিয়েছেন আর্ন্তজাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)।

ক্ষমতার অবব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আদালত। রাখাইনে গণহত্যা ও রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।