গাজীপুরে র‌্যাব-১’র সদস্যরা পৃথক দু’অভিযানে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে। এসময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ও প্রিন্ট কপি জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-১’র স্পেশালাইজ কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, এসএসসি পরীক্ষা ২০২০ এর ভূয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের কতিপয় সদস্য গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার বাসাইর এলাকার দীপ্ত দাসের বাড়ীতে সোমবার ভোর রাতে অবস্থান করছে। এ গোপন সংবাদ পেয়ে কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাাহ আল-মামুনের নেতৃত্বে র‌্যাব-১’র সদস্যরা সেখানে অভিযান চালিয়ে কালীগঞ্জ থানার জামালপুর নগরপাড়া গ্রামের মোঃ মজিবুর রহমানের ছেলে মোঃ মাহবুব আলম (২৪) ও একই থানার বাসাইর এলাকার মৃত জীবন দাসের ছেলে দীপ্ত দাসকে (২৩) আটক করে। এসময় তাদের কাছ থেকে আসামীর নিকট হতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ম্যাসেজ প্রদানকৃত কাজে ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল ফোন, নগদ সাড়ে ১২ হাজার টাকা এবং মোবাইল ফোনের ফেসবুকের আইডি “আকাশ খান” হতে প্রিন্ট করা পোষ্ট ৫০ কপি জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, জব্দকৃত মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে আটককৃতদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ও হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে বিভিন্ন সংশিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়।

এদিকে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উত্তর খাইলকৈর মাদ্রাসা রোডের মমতাময়ী বিদ্যানিকেতনের সামনে প্রায় একই সময়ে অপর এক অভিযান চালিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের এক সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব সদস্যরা। তার নাম আবু বক্কর সিদ্দিক (২৮)। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার লাখহাটি গ্রামের মো. আব্দুস সোবহানের ছেলে আবু বক্কর ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সাইন্স (ইউআইটিএস) এ বিএসসি’র (৩য় বর্ষ) ছাত্র

র‌্যাব-১-এর সহকারি পরিচালক মো. মোর্শেদুল হাসান জানান, আটক আবু বক্করের কাছ থেকে প্রশ্নফাঁস কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। ওই মোবাইল ফোনে তথ্য বিশ্লেষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে বিভিন্ন সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি আরো জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি আবু বক্কর স্থানীয় মমতাময়ী বিদ্যানিকেতন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্র/ছাত্রীদের প্রাইভেট/টিউশন পড়ান।

র‌্যাব জানায়, ছাত্র/ছাত্রীদের প্রাইভেট/টিউশন পড়ানোর আড়ালে বিগত ২০১৯ সালে ফেসবুক আইডির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করে। তিনি ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে বিভিন্ন ছাত্র/ছাত্রীদের সঙ্গে মেসেজের মাধ্যমে প্রলোভন দেখালে অনেক সুযোগ সন্ধানী ছাত্র/ছাত্রীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ পূর্বক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইমো ও হোয়াটস্অ্যাপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে মোটা অংকের টাকা আয় করেন। টাকা গ্রহণের পর আবু বক্কর কখনো বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার পূর্বের প্রশ্নপত্র কাটছাট করে, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে নিজেই প্রশ্নপত্র তৈরি করে সরবরাহ করতেন। তিনি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে চলমান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে সুযোগ সন্ধানী ছাত্র/ছাত্রীদের নিকট থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে তাদের প্রশ্ন সরবরাহ করার পরে ফাঁসকৃত প্রশ্নগুলো সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমো থেকে ডিলেট করে দিত বলে আটক আবু বক্কর স্বীকার করেছে।