গাজীপুরে শনিবার পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এক যাত্রীবাহী বাসের সুপারভাইজার ও হেলপারসহ ৪জন নিহত হয়েছে। দূর্ঘটনায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্ততঃ ১৯জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া গেছে।

জয়দেবপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম ও স্থানীয়রা জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সিনেট অধিবেশনে যোগ দিতে শনিবার সকালে ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুরের বোর্ড বাজারস্থিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। পথে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকায় একটি প্রাইভেটকারকে সাইড দিতে গিয়ে তাকে বহনকারী জীপটির চাকা ফেটে গেলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে সড়কের ডিভাইডারের সঙ্গে জীপটির সজোরে ধাক্কা লাগে। এঘটনায় তিনি আহত হন। স্থানীয়রা ও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। খবর পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম. তরিকুল ইসলামসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ আহতকে দেখতে হাসপাতালে যান এবং খোঁজ খবর নেন।

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের মাথা, হাত ও বাম পায়ে আঘাত পেয়েছেন। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত।

জিএমপি’র সদর থানার ওসি আলমগীর ভুইয়া ও স্থানীয়রা জানান, ঢাকা থেকে এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস শনিবার সকালে ময়মনসিংহ যাচ্ছিল। পথে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকার ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ৩নং গেইটের সামনে পৌছলে একই দিকেগামী ময়দা-আটা বোঝাই অপর একটি কাভার্ডভ্যানকে বেপরোয়াগতিতে ওভারটেক করার সময় বাসটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এসময় বাসটি ওই কাভার্ডভ্যানের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে কাভার্ডভ্যানটি সড়কের পাশে উল্টে যায় এবং বাসের সামনের অংশ দুমড়ে মুছড়ে যায়। এঘটনায় বাসের সুপারভাইজার তৈয়বুর রহমান (৪৫) ও হেলপার (২৫) ঘটনাস্থলেই নিহত এবং অন্ততঃ ১৮জন আহত হয়েছে। নিহত তৈয়বুর নরসিংদী জেলা সদরের চরদিঘলদী এলাকার আব্দুল কাদিরের ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে। হতাহতরা সবাই বাসের আরোহী ছিলেন।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এলাকায় সড়ক দূর্ঘনায় গুরুতর আহত ৯জনকে এ হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ছাত্রী ময়মনসিংহ সদরের আকোয়া হাজীবাড়ীর সাদেক মিয়ার মেয়ে সাবরিনা আক্তার মিম (২০) ও একই জেলার সিজান (২২) নামের দু’জনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। আহত অপর ৭জন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরা হলো- ময়মনসিংহ জেলা সদরের ইরতিজা দীপ (২৪), ঢাকার শান্তি নিকেতন এলাকার শামসুল আলম (৬৮) ও তার মেয়ে সামছিয়া আফরিন, ঢাকা মোহাম্মদপুরের রিফাত (২৮), ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার ডগুয়া গ্রামের নয়ন (৩০), নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানার পাগলা পশ্চিমপাড়া এলাকার সোহেল রানা (৩৪) এবং অজ্ঞাত (৩০)।

এদিকে মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুরুল হক জানান, শ্রীপুরে শনিবার পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় দু’জন নিহত হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকায় এক ব্যক্তি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হচ্ছিল। এসময় ময়মনসিংহগামী একটি পিকআপভ্যান তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে সে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। তার নাম সরাফত আলী (৭০)। তিনি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানার মোল্লাপাড়া এলাকার মৃত কেল্লা মোল্লার ছেলে। তিনি শ্রীপুরের আবদা এলাকার ভাড়া বাসায় এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। এর আগে সকাল আটটার দিকে গিলাবেড়াইদ এলাকার হাজী মফিজ উদ্দিন সিএনজির পাম্পের সামনে একই মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী একটি বাস তাকে ধাক্কা দেয়। এতে মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে।