আরব বসন্তের ধাক্কায় ক্ষমতাচ্যুত হওয়া মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দেশটির রাজধানী কায়রো হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। হোসনি মোবারক ১৯৮১ সাল থেকে প্রায় ৩০ বছর ক্ষমতাসীন ছিলেন। আরব বসন্তের ধাক্কায় ২০১১ সালে ১৮ দিনের তীব্র আন্দোলনের মুখে তার ৩০ বছরের কঠোর শাসনের অবসান ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই মাস পর ২০১১ সালের এপ্রিলে গ্রেপ্তার হন হোসনি মোবারক। তখন থেকেই তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে কড়া নিরাপত্তায় সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন।

ব্যাপক এই গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। ২০১১ সালে দেশটিতে গণঅভ্যুত্থানের সময় তার নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়। পরে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দেয় আদালত।

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মুবারক। তবে গণঅভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আনা হয়। তিন বছর কারাভোগের পর তিনি কায়রোর সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্তি পান হোসনি মোবারক। এমনকি বিচার বিভাগের কাছ থেকে সব ধরনের অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পান তিনি।

১৯২৮ সালে নীলনদ তীরের মনুফিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন হোসনি মুবারক। ১৯৪৯ সালে মিশরের বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৭২ সালে তিনি বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় মুবারক জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। যুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালে তাকে মিশরের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল-সাদাত।

১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল-সাদাতের হত্যার পর তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট এয়ার চিফ মার্শাল হোসনি মুবারক দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তখন থেকে ৩০ বছর তিনি মিশর শাসন করেন।আরব বিশ্বে কাঁপিয়ে তোলা ওই গণ-অভ্যুত্থানে গদি হারানো নেতাদের মধ্যে মুবারকই প্রথম, যাকে নানা অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।