একইদিনে বিদ্যুতের পাশাপাশি পানির দাম বাড়ালো ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা। ঢাকা ওয়াসায় আবাসিক ক্ষেত্রে দাম প্রতি ইউনিটে (এক হাজার লিটার) ১১.৫৭ টাকা থেকে ২ টাকা ৮৯ পয়সা বাড়িয়ে ১৪.৪৬ টাকা এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ৩৭.০৪ টাকা থেকে ২ টাকা ৯৬ পয়সা বাড়িয়ে ৩০.৩০ টাকা করা হয়েছে। ওয়াসার পানির দাম বছরে সাধারণত ৫ শতাংশ হারে বাড়ার নিয়ম থাকলেও এ দফায় আবাসিকে বাড়ানো হয়েছে ২৪.৯৭ শতাংশ। আর বাণিজ্যিকে বাড়ানো হয়েছে ৭.৯৯ শতাংশ।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসায় আবাসিক ক্ষেত্রে ৯.৯২ টাকা থেকে ২ টাকা ৪৮ পয়সা বাড়িয়ে ১২.৪০টা এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ২৭.৫৬ থেকে ২ টাকা ৭৪ পয়সা বাড়িয়ে ৩০.৩০ টাকা করা হয়েছে। চট্রগ্রাম ওয়াসায় ৫৯,০৪৭টি বিলযোগ্য সংযোগ রয়েছে যার মধ্যে ৯২ শতাংশ আবাসিক ও ৮ শতাংশ অনাবাসিক সংযোগ। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব সাঈদ উর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সরকার বিভাগের উপ সচিব সাঈদ উর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন ওয়াসার পানির প্রতিটি ইউনিটের দাম ছিল মাত্র ছয় টাকা। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গ্রাহক, বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মতামত নিতে গণশুনানির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা নেই।

জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঢাকা ওয়াসার অধীনে জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪.৮ শতাংশ সেবাগ্রহীতা চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না। ৫১.৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতার কাছে সরবরাহকৃত পানি অপরিষ্কার। ৪১.৪ শতাংশ সরবরাহকৃত পানি দুর্গন্ধযুক্ত। ঢাকা ওয়াসার সেবার মান ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সার্বিকভাবে ৩৭.৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতাই অসন্তুষ্ট। সেবাগ্রহীতাদের মতামত না নিয়ে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও সিস্টেম লস নিরসনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই একতরফাভাবে পানির দাম বাড়ানোর গ্রহণযোগ্য নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর নামে অযৌক্তিকভাবে পানির দাম বাড়ানোর আগে ঢাকা ওয়াসার ক্রয় প্রক্রিয়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও গ্রাহক পর্যায়ের মিটার রিডিংসহ নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

এর আগে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্যে পানির দাম ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ওয়াসা। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে গত বছরের সেপ্টেম্বর দেওয়া চিঠিতে ওয়াসার এই প্রস্তাব করে। আবাসিক ব্যবহারের জন্যে প্রতি ইউনিট বা ১ হাজার লিটার পানির দাম ১১ দশমিক ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্যে বর্তমান দাম ৩৪ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়।

মূল্যে বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ওয়াসা বলছে, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্যে পানির দাম বাড়ানো দরকার। এছাড়াও, সংস্থাটির পরিচালনা খরচ বেড়েছে।

২০১৭ সালে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের পানির দাম যথাক্রমে ২২ এবং ১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়ে ছিল। ওয়াসা আইন-১৯৯৬ এর ২৩ ধারা অনুযায়ী, ওয়াসা বোর্ড পানির দাম বার্ষিক পাঁচ শতাংশ হারে বাড়াতে পারে। গত বছরও সংস্থাটি মুদ্রস্ফীতির কথা বলে পাঁচ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে। নগরবাসী বলছে, পানির দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়বে নগরবাসীর ওপর। পানির দাম বৃদ্ধির কারণে বাড়ীওয়ালারা বাড়ী ভাড়া বাড়িয়ে দেবে। এতে পিষ্ঠ হবে স্বল্প আয়ের মানুষ।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ওয়াসার সামগ্রিক সেবার মান ভালো না। কিছু জায়গায় তাদের সেবা ভালো হলেও বেশিরভাগ জায়গায়, বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় তাদের সেবার মান খুব খারাপ। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবছর পানির দাম বাড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।