দুদকের করা মামলায় পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের প্রথম দফায় জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের হাত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর প্ররোচনায় জেলা দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক আবদুল মান্নান তাকে জামিন দেননি বলে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আউয়াল। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, দুদককে প্রভাবিত করে তিনি ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে তিনটি মিথ্যা মামলা করিয়েছেন প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল। এ মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। কিন্তু তার জামিন নামঞ্জুর করতে জেলা দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক আবদুল মান্নানকে প্রভাবিত করেন প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী। শুধু তাই নয়, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে মন্ত্রী পিরোজপুরের নাজিরপুরের বাসভবনে জেলা জজ আবদুল মান্নানকে নিয়ে এ বিষয়ে গোপন বৈঠক করেন।

এদিকে গত রোববার পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানের সঙ্গে মুজিববর্ষ পালন বিষয়ে আলোচনা করতে যান। তখন জেলা ও দায়রা জজ তাদের জানান, মন্ত্রী রেজাউল করিম আউয়াল ও তার স্ত্রীকে জামিন দিতে নিষেধ করেছেন। তার নিষেধ উপেক্ষা করার ক্ষমতা জেলা ও দায়রা জজের নেই।

সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ এনে আউয়াল বলেন, ‘আলোচিত ক্যাসিনো সম্রাট জি কে শামীমকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে তিনি একটি, তার ছোট ভাই নুরে আলম শাহিন এবং ভাইয়ের বন্ধু কামরুজ্জামান শামিমের জন্য মোট তিনটি কালো রঙের দামি গাড়ি উপঢৌকন হিসেবে নিয়েছেন মন্ত্রী।’

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নিয়ে প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করে আউয়াল বলেন, ‘শ ম রেজাউল করিম ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেছে। সে হিসেব অনুযায়ী ৭১ সালে তার বয়স মাত্র নয় বছর। একজন বাচ্চা কীভাবে সে সময় মুক্তিযুদ্ধে যায়? মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এহেন মিথ্যাচার ও নিজেকে স্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করা সঠিক নয়। এর জন্য তার জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

জেলা জজ আবদুল মান্নানের বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর সাথে আমার জামিনের কোনো সম্পর্ক নেই। জজের বিরুদ্ধে আগে থেকে নানা অভিযোগ আছে শুনেছি।’ তবে অভিযোগের বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সর্বৈবভাবে অসত্য ও মিথ্যাচার। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এসব মিথ্যাচার করছেন।’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে দুদকের দুর্নীতি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আট সপ্তাহের নেওয়া জামিনের শেষ দিনে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন। পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে জেলা জজকে বদলি করা হলে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের আদালতে জামিন বাতিলের আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানান আউয়ালের আইনজীবীরা। পরে শুনানি শেষে গতকাল বিকেল ৪টায় বিচারক তাদের দুই মাসের জামিন মঞ্জুর করেন।