মুক্তিপণের দাবীতে রাজধানী থেকে অপহৃত মাদ্রাসা ছাত্র ইব্রাহিম হোসেনকে গাজীপুরে এনে খুনের ঘটনার মূলহোতা নিহতের ফুপাতো ভাইকে রবিবার গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১’র সদস্যরা। প্রেমিকাকে দামী উপহার ও তাকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার জন্য টাকা যোগাড় করতে এবং মামীর উপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রতিশোধ নিতে ইব্রাহিমকে খুন করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে নিহতের গ্রেফতারকৃত ফুপাতো ভাই। রবিবার র‌্যাব-১’র স্পেশালাইজ কোম্পানী পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ বনি আমিন(২১)। সে বরগুনা জেলা সদর থানার মাইঠা গ্রামের মোঃ আবুল কালাম আজাদের ছেলে।

র‌্যাব-১’র কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, গত বৃহষ্পতিবার (৫ মার্চ) রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে অপহৃত হয় ইব্রাহিম হোসেন (১০)। সে ওই এলাকার মনির হোসেনের ছেলে এবং স্থানীয় দারুল উলুম মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল। অপহরণের দু’দিন পর শনিবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মিরেরগাঁও এলাকায় রেললাইনের পাশের একটি পুকুর থেকে ইব্রাহিমের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইব্রাহিম খুনের মূলহোতা নিহতের ফুপাতো ভাই বনি আমিনকে রবিবার ভোর রাতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার নিহতের বাসা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১’র সদস্যরা। এসময় নিহতের স্কুল ব্যাগ, বই-খাতা, কলম ও টিফিন বক্সসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশু ছাত্র ইব্রাহিম খুনের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দিয়েছে গ্রেফতারকৃত বনি আমিন।

তিনি আরো জানান, গত কিছুদিন ধরে নিজ প্রেমিকাকে দামী উপহার দিতে ও তাকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার জন্য টাকা যোগাড় করতে এবং মামীর উপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে বনি আমিন। পরিকল্পনানুযায়ী গত বৃহষ্পতিবার (৫ মার্চ) দুপুরে বাবার অসুস্থ্যতার কথা বলে ইব্রাহিম হোসেনকে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার মাদ্রাসা থেকে কৌশলে অপহরণ করে গাজীপুরের সালনা এলাকায় নিয়ে আসে বনি আমিন। সন্ধ্যায় সালনা মীরেরগাঁও রেললাইনের পাশে জঙ্গলের ভিতর নিয়ে ইব্রাহিমকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ পুকুরে ফেলে চলে যায় সে। যাওয়ার সময় সে সালনা এলাকার একটি মসজিদে এশার নামাজ আদায় করে। পরবর্তীতে বনি আমিন বিভিন্ন মোবাইল ফোনে মাধ্যমে ভিকটিমের কন্ঠ নকল করে ভিকটিমের বাবার মোবাইল ফোনে অপহরণের কথা জানায় এবং মুক্তিপন হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করে হুমকি দেয়। সে মুক্তিপণ বাবদ ইব্রাহিমের বাবা মনির হোসেনের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পুনরায় হাজীবাগ মামার (নিহতের বাবা) বাসায় ফিরে যায়। শনিবার (৭ মার্চ) গাজীপুরে ভিকটিম ইবাহিমের লাশ উদ্ধারের সংবাদ শুনে বনি আমিন তার মামা-মামীর সঙ্গে কান্নার অভিনয় করে যাতে তাকে কেউ সন্দেহ না করে। নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সে ঢাকা আজিমপুর কবরস্থানে লাশের জানাযাসহ লাশ দাফন কাজ সম্পন্ন করে বলে গ্রেফতারকৃত বনি আমিন জানিয়েছে।