করোনার প্রভাব পড়েছে গাজীপুরের চিত্তবিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। গত এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের দর্শনার্থীসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে লোকজনের সমাগম কমেছে সবচেয়ে বেশি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পার্কে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১লাখ ৫১হাজার ৮শ ২২জন, ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৫ জন। কিন্তু মার্চ মাসে এসে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। পার্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯সালের মার্চ মাসে দর্শনার্থীর সংখ্যা ২লাখ অতিক্রম করলেও ২০২০সালের মার্চ মাসে প্রায় অর্ধেকে নেমে যায়। সোমবার পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা ২০হাজার অতিক্রম করে নি। বিশেষ করে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পরিস্থিতি ঠিক থাকলেও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পার্কে দর্শনার্থীর আগমন বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। পার্কের বিভিন্ন ইভেন্টে দায়িত্বপ্রাপ্তদের এখন দিনের অধিকাংশ সময় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। পার্ক কর্তৃপক্ষের ধারণা মূলত করোনার প্রভাবেই দর্শনার্থীর সংখ্যা কমছে।

সাফারী পার্কের প্রধান ফটক চলতি বছর প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যে ইজারা নিয়েছেন নাহিদা এডভার্টাইজিং এন্ড প্রিন্টিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নাহিদা ইসলাম জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে শূণ্যের দিকে চলে আসছে। গত কয়েকমাস ধরে দিনে টিকেট বিক্রি বাবদ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও এখন টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫-১০হাজার টাকা। বিশেষ করে বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা সফরে এই পার্কে এসে থাকে। করোনা আতঙ্কেই এবার ভিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পার্কের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট কোর সাফারী পার্ক। এখানে দর্শনার্থীদের পরিবহনের জন্য রয়েছে পাঁচটি সাফারী বাস। আগে অধিকাংশ সময় এই বাসে উঠতে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন হলেও এখন দর্শনার্থী কম হওয়ায় গত তিনদিন ধরে চারটি বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোর সাফারী ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এডভেঞ্জারের ব্যবস্থাপক মুকুল মিয়া জানান, এসময় দেশের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সফর, কারখানাসহ নানা সংগঠনের বিভিন্ন মিলন মেলায় মুখরিত থাকে সাফারী পার্ক। করুনা আতঙ্কে জনসমাগম না করতে নির্দেশ দেয়ায় পার্কে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। দর্শনার্থীর অভাবে অলস সময় কাটছে তাদের।

পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার আনিসুর রহমান জানান, করোনা আতঙ্কে এখন এ পার্কে দর্শনাথী নেই বললেই চলে। পার্ক ও এর আশপাশ এলাকা এখন প্রায় জনমানবশূণ্য। প্রতিবছর এমন সময় পার্কে ব্যাপক জনসমাগম হলেও এবার তা নেই ।

সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এই বিনোদন কেন্দ্র করোনা আতঙ্কে এখন ফাঁকা। সাধারণ মানুষ জনসমাগম স্থানগুলো এড়িয়ে চলার কারনে হয়ত দশনার্থীর সংখ্যা এভাবে কমছে। তবে যারা আসছে, তাদের জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফ হতে করোনা রোধে সচেতনতা তৈরী করা হচ্ছে।

একই অবস্থা জেলার বিভিন্ন পিকনিক স্পটসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। বিগত বছরগুলোর এসময়ে এসব স্পটগুলোতে বিপুল সংখ্যক লোকসমাগম হতো। মানুষের পদচারণায় নীরব এলাকাগুলো সরব থাকতো। কিন্তু করোনা ভাইরাস আতংকে সেসবগুলো এখন অনেকটাই ফাঁকা ও নীরব থাকছে। এতে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন পর্যায়ে।