জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশত বর্ষে তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি চিঠি পৌছে দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা এ চিঠি পড়বে প্রায় দেড় কোটি শিশু। মুজিব বর্ষের সূচনালগ্নে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়ুয়া শিশুদের এ চিঠি পাঠ করার কর্মসূচি ছিল। কিন্তু করোনা সতর্কতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে এ কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর দিনটিতেই শিশুদের হাতে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন সোমবার মন্ত্রণালয়ে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চিঠি আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসেই এ চিঠি পাঠ করবে। আমরা প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে আজকের মধ্যেই সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দিচ্ছি।

জাকির হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বন্ধের সময়টা শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকতে হবে। বাইরে ঘোরাফেরা করা যাবে না। বাসায় বসে লেখাপড়া করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তাহলে আবারও স্কুল খোলা হবে। নতুবা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর প্যাডে লেখা মুজিববর্ষের লোগোসহ হুবহু চিঠিটি শিশুদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ঘরে বসে তারা এ চিঠি পাঠ করবে। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিশুকে লেখা সরকারপ্রধানের এটিই প্রথম চিঠি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি বিশ্বরেকর্ড হতে পারে।

চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন-

“ছোট্ট সোনামণি, আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিও। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম ও ভাইবোনদের স্নেহ পৌঁছে দিও। পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো।

আজ ১৭ই মার্চ। ১৯২০ সালের এদিনে বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা।

দুঃখী মানুষদের ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। বারবার কারাবরণ করেছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করতো। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন- তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।

২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশ এই জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছে। সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।

প্রিয় বন্ধু,

ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে জাতির পিতাকে। তাঁর নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের সন্ধানে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তাঁরই ত্যাগের মহিমায়।

সোনামণি,

জাতির পিতার কাছে আমার অঙ্গীকার, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি নয়। পিতা ঘুমিয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তিনি শান্তিতে ঘুমান। তাঁর বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

আমরা জেগে রইবো তাঁর আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে মানুষ-প্রজন্মের পর প্রজন্ম- তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। জাতির পিতার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।

তোমরা মন দিয়ে পড়ালেখা করবে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবে।

জয় বাংলার জয়, জয় মুজিবের জয়, জয় বঙ্গবন্ধুর জয়।

ইতি,

তোমারই

শেখ হাসিনা।”