জাতি হিসেবে আমরা যেমন সাহসী, ঠিক অনেক বিষয়েও আমরা খামখেয়ালি। করোনা ভাইরাসের আক্রমণ চলছে গ্লোবালি। এটা বাংলাদেশের কোন ডমেস্টিক ইস্যু নয়। করোনা ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মানুষের ভোগান্তির মর্মান্তিক চিত্র জনজীবনকে স্থবিরতা এনে দিয়েছে, ব্যস্ত সকল নগরী শুনশান নিরবতা নিয়ে শ্মশানে পরিনত হয়েছে। আতংকিত জনপদ স্বজন হারিয়ে নিজকেও সুরক্ষিত মনে করতে পারছেনা।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রায় দুমাস পরে । এটার ভয়াবহতা ও ভিকটিমাইজিং স্ট্যাটিসটিকস নিয়ে আমরা যথেষ্ট দেখার ও জানার সুযোগ পেয়েছি, যা আমাদের সতর্কতা অবলম্বনে সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু আমরা জনগণ ও জনগণের অভিভাবক খ্যাত সরকার করোনা ভাইরাস এটাকিং নিয়ে কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং জনগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের নিরাপদ রাখার স্বার্থে কতটুকু সচেতনতা অবলম্বন করছে তা বিভিন্ন ঘটনার দৃশ্যমাণ চিত্র ও দায়িত্বশীলদের আনপ্যারালাল স্পীচ আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।

আমরা এটাও জানি যে, এই করোনা ভাইরাসের নিরাময়যোগ্য কোন মেডিসিন কোন দেশ উল্লেখযোগ্য হারে আবিস্কার করতে পারেনি, স্বল্প পরিসরে চীন যা আবিস্কার করেছে, তা বৈশ্বিক অগনিত জনপদের জন্য মোটেই ইভেক্টিভ নয়। এছাড়াও চীন এই মুহুর্তে তাদের সৃষ্ট মেডিসিন অন্যের জন্য ডেডিকেট করবে কি না, সে বিষয়টি তার আভ্যন্তরীণ নীতির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং নিরাময়যোগ্য মেডিসিনের অভাবে একমাত্র টনিক হলো সচেতনতাবোধ। সাবধানতা অবলম্বনই পারে এটার এটাকিং কোয়ান্টিটি কমিয়ে আনতে।

সচেতনতা যেখানে ওষুধের বিকল্প বা সচেতনতাই একমাত্র ভরসা, সেখানে জনগণকে সচেতন করা ও করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে গত দুমাস সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলো কি কি আগাম পদক্ষেপ নিয়েছে,সে বিষয়টিও পরিস্কার নয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের কিছু কঠোর কানুন জনগণ এই কারণেই মানতে বাধ্য , তা হলো বিশ্বব্যাপী করোনায় মানুষের মৃত্যুর হার আমাদের সকলের ভীত যেভাবে কাপিয়ে তুলেছে, তাতে বাচার তাগিদেই রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জনগণ মানতে বাধ্য হতো। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সচেতনতামূলক সম্প্রচার ও ভিকটিমদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে সব পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিলো , তা দৃশ্যমাণ নয়। আর এ কারণেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব থাকা বিভিন্ন মন্ত্রী ও সাংসদ এবং কর্তাব্যক্তিরা করোনা নিয়ে নানা ভাবে ব্রিফিং করে যাচ্ছে। ডাক্তারদের স্পীচেও রয়েছে মারাত্মক ভিন্নতা, যা মানুষের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ।
করোনা ভাইরাসের প্রেস ব্রিফিং নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত দায়িত্বশীল কিছু প্রতিনিধির মন্তব্য লেখার শেষাংশে তুলে ধরা হলো।

এখানে আমার পারছেপশন হলো, আমরা জাতি হিসেবে তুলনামূলক খুব কম সচেতন বিধায় ভিকটিম দেশগুলোর মর্মান্তিক চিত্রের অভিজ্ঞতা থেকে করোনা ভাইরাসের কুফল, মৃত্যুঝুকির জিস্ট পরিসংখ্যান, সচেতনতা ও প্রনালী বিষয়ে অন্তত দুমাস আগ থেকেই বাংলাদেশে বহুল প্রচার ও সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ নিয়ে কাজ করতে পারতো। প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে মুভমেন্ট এন্ড প্রোটেকশন কোডের আওতায় পেনাল্টি করলে কোয়ারেনটাইনের বিষয়টি অনেকটা সংরক্ষিত হতো। পাশাপাশি প্রবাসীদের দেশে ফেরার ব্যপারে করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসগুলো নিরুৎসাহিত করতে পারতো। জরুরিক্ষেত্রে বিদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশে গমনাগমন ও অবস্থান সম্পর্কে নিদিষ্ট স্বাস্থ্য কোড অনুসরণপূর্বক প্রবেশাধিকার ও বহিঃগমন সর্বনিন্ম কোঠায় আনা যেত।

দেশের বিভিন্ন এয়ারপোর্টে যে সমস্ত স্ক্যানার ও করোনা ডিটেকটিভ এপারেটাস রয়েছে, তার কার্যকারিতা, ব্যবহার ও ক্যাপাসিটি নিয়েও শংকা রয়েছে। প্রবাসীদের এয়ারপোর্ট থেকে পালিয়ে যাওয়া ও কোয়ারেনটাইনের আওতায় না থাকার বিষয়েও রয়েছে অনেক হাস্যকর ঘটনা। দেশে প্রবাসীদের আগমন ও ম্যান্ডেটরি কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন এয়ারপোর্ট, ল্যান্ডপোট ও সী পোর্টে যারা দায়িত্বশীল আছেন, তাদের ভুমিকা ও অনুধাবন ম্যানিয়া নিয়েও জনগণের মধ্যে অনেক ভ্রান্তি রয়েছে।

মোস্ট করোনা ভাইরাস ইফেক্টিভ ইতালির মতো দেশ থেকেও প্রতিদিন আসছে শতশত প্রবাসী, যারা নিজেরাও ঝুকিতে রয়েছেন, আবার দেশে অনুপ্রবেশ করেও নিজ পরিবার থেকে শুরু করে আশপাশের অন্যদেরকেও সংক্রামিত করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা সম্পর্কিত নীতিনির্ধারণী বৈঠকে কি এমন খামখেয়ালীর কথা বলা হয়েছিলো, নিশ্চয়ই না। করোনা ভাইরাসের আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য যেহেতু আমাদের কোন প্রতিষেধক নেই, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক নেই, নেই শতভাগ সনাক্তকরণ কোন চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, সেহেতু সচেতনতা ও কোয়ারেনটাইনই একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবেই গন্য। কিন্তু এটার পর্যাপ্ত অভাববোধ ও আগাম সম্প্রচারের অভাবে আজ আমরা ভিকটিমাইজ। এটাকে অধিকাংশ মানুষ পাত্তা না দিয়ে যাচ্ছেতাই জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ফ্রি মুভমেন্টের সুযোগ পাচ্ছে বিধায় এটার প্রতিকার করা এখন খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। বিস্তার হচ্ছে কিন্তু উপসমের রাস্তা খুব একটা খোলা নেই। কারণ নতুন এই কনছেপ্টের সাথে আমরা নিধিরাম সর্দার। মৃত্যুর ভয় যেন আমাদের মোটেই কাবু করছে না।

আমরা জনগণ এই অবস্থায়ও সচেতন নই। শুধু সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ইতালি ও বিলেত ফেরত মানুষ পেয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে খুব করেই মমতা দেখানোর মক্ষম সময় মনে করছি। নিজকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদের মতো নির্বোধ মানুষদের পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব ও খামখেয়ালীপনা রয়েছে। সচেতনতা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক কঠিন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কথিত মহাজ্ঞানীদের কাস্টোডিতে এনে বাস্তব কোয়ারেনটাইন করা। স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলো এখন যে ভুমিকা রাখছে তা নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয় কিন্তু খুব দেরীতেই শুরু হয়েছে, যা আমাদের কানে পানি ঢুকতে সময় নিচ্ছে। স্বাস্থ্য সচেতনতার মূল উপাদান বা সেনিটাইজার নিয়েও চলছে বাজারে তেলেছমাতি। প্রোটেকশন উপাদানগুলোর অপ্রতুলতার পাশাপাশি অভাবনীয় মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গিয়েছে বিধায় সচেতন থাকতে চেয়েও অনেকে নিরুপায়। এটাই সেনিটাইজার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার মোক্ষম সময়। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরাও পিছিয়ে নেই আমাদের মতো বেকুব মজুদদারদের আগাম ক্রয় ম্যানিয়ার সুযোগ পেয়ে।

অনেক এলাকার মানুষ করোনা ভাইরাসকে মোটেই পাত্তা দিচ্ছেনা। এটাকে নিয়ে রসিকতা করে ঝুকিতে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষ। এদের কাউন্সেলিং এর আওতায় আনতে সরকারের নিতে হবে নতুন পদক্ষেপ। থানকুনি পাতার বানিজ্যে ও বিশ্বাস সকল অত্যাবশকীয় পদক্ষেপকে গুরুত্বহীন করে দিচ্ছে। কেউ জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে, কেউ সুযোগের বানিজ্যে নিজেদের কোটিপতি বানিয়ে নিচ্ছে, কেউ অপব্যাখ্যার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসকে পাত্তা না দিয়ে অন্যের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাড়াচ্ছে।

কনজুমার রাইটস এসোসিয়েশন, বাজার মনিটরিং সেল ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের খুব একটা মনিটরিং পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। সবকিছু মিলিয়ে দেশের এই অবস্থায় দায় কার? এই প্রশ্নের জবাব পেতেপেতে হয়তো অনেকেই জীবনযুদ্ধে হেরে যাবে। এই দায় সকলের। যারা আমরা সময়ে পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করি, দায় তাদের, অর্থাৎ রাষ্ট্রযন্ত্রও এটার বাইরে নয়। মহামারীর অভিজ্ঞতা থেকে আগাম পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য এই বহুমাত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

দেশের ক্রান্তিলগ্নে এই মুহুর্তে সকল দায়ভারের প্রশ্ন এড়িয়ে আমাদের উচিৎ নিজে সচেতন থাকা ও অন্যকে সচেতন করতে উৎসাহিত করা। আর রাষ্ট্রযন্ত্রের উচিৎ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে বাস্তব কোয়ারেনটাইনের সেলে বন্দী রাখা। প্রবাসীদের দেশে আগমন এই মুহুর্তেই বন্ধ করে দিয়ে রিসেন্ট ইমিগ্রান্ট এরাইভাল লিষ্ট অনুযায়ী জেলা, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের আটকিয়ে সুনিদিষ্ট এলাকায় আইসুলেট নিশ্চিত করা। পাশাপাশি বিভিন্ন মিডিয়ায় বহুল সম্প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে আরও সচেতন করা।

করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা রসিকতা না করে দায়িত্বশীল বক্তব্যের মাধ্যমে জাতির ক্রান্তিলগ্নে পাশে দাড়ানোই উত্তম। সরকারের মাঠ পর্যায় থেকে নীতিনির্ধারণী ফোরাম পর্যন্ত করোনা বিষয়ক নির্দেশনা ও স্পীচ যেন প্যারালাল হয়, সে দিকে দৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি এটার বিস্তার লাঘবে গ্লোবাল এসিস্ট্যান্ট নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে কিছু এক্সপার্ট মেডিকেল টিম দেশে হাজির করা। না হলে কান্ডজ্ঞানহীন এই মানুষের দেশ ভয়াবহ অবস্থায় রূপ নিতে পারে, যা দৃশ্যমাণ এই উন্নয়নের ধারাকে তরান্বিত করতে অন্তরায় হয়ে দাড়াবে।

দেশের স্বার্থে, মানুষের জীবন রক্ষার্থে আমরা যে যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করি ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে অন্যকে উৎসাহিত করি। এই মুহুর্তে এটার একমাত্র প্রতিকার ও প্রতিষেধক হলো সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা। আমরা আতংক সৃষ্টি না করে সচেতন করি।
আল্লাহ আমাদের এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার ক্ষমতা ও সাহস দিক। আমিন।

দায়িত্বশীল কিছু মানুষের মন্তব্যের কপি পেষ্ট এর কার্টিসি এটার শেষাংশে উল্লেখ রয়েছে।

Mostafizur Rahman