গাজীপুরে ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক এলাকায় মহাসড়কে ডাকাতিকালে রবিবার রাতে ডাকাতদলের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হয়েছে। এসময় ডাকাতদলের গুলিতে পুলিশের এক এসআই আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রসহ ও লুণ্ঠিত মালামালসহ ডাকাত দলের এক সদস্যকে আটক এবং ডাকাতদের হাতে জিম্মি চারজনকে উদ্ধার করেছে।

আটককৃতের নাম মোঃ শরীফ (২৫)। সে গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানার রুদ্রপুর এলাকার মোঃ আলমগীরের ছেলে।

জিএমপি’র সদর থানার ওসি আলমগীর হোসেন ভ’ইয়া জানান, গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের রাজেন্দ্রপুর এলাকার ৪ নং গেইটের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৭-৮ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাত দল রবিবার রাত ১১টার দিকে কয়েকজনকে জিম্মি করে টিভি ও টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করছে। এ খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এসআই জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে জিএমপি’র সদর থানা পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে সদর থানা পুলিশের এসআই জহিরুল ইসলামের (৪০) পেটের বাম পাশে ডাকাতদের ছোড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি আহত হন। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে দু’পক্ষের মাঝে গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে ডাকাতদল পিছু হটে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ডাকাত দলের দুধর্ষ সদস্য মোঃ শরীফকে (২৫) আহতাবস্থায় আটক এবং তাদের হাতে জিম্মি চারজনকে উদ্ধার করে। এসময় সেখান থেকে ডাকাতদের ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ও টিভিসহ লুণ্ঠিত বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়। আহত এসআই জহিরুল ও ডাকাত সদস্য শরীফকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। শরীফের বিরুদ্ধে ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি সে আদালত থেকে জামিন পেয়ে আবারো এলাকায় ডাকাতি শুরু করে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্ততি চলছে।

ঘটনার শিকার ঢাকার বাড্ডা থানার সাতারকুল এলাকার বাসিন্দা মো. শাহ আলম জানান, সম্প্রতি নেত্রকোনার দূর্গাপুর এলাকার তার মেয়ের বিয়ে হয়। রবিবার সন্ধ্যায় মেয়ের জন্য টিভি, ফ্রিজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র একটি পিকআপে করে নিয়ে ঢাকা থেকে নেত্রকোনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাত ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ন্যাশনাল পার্কের ৪নং গেইট এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে কে বা কারা পিক-আপে ঢিল ছুঁড়ে। বিকট শব্দ পেয়ে পিক-আপটি থামালে কয়েকজন সশস্ত্র যুবক তাদের ঘিরে ফেলে এবং গাড়িতে উঠে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে শাহ আলম, তার শ্যালক নজরুল ইসলাম, গাড়ির চালকও তার সহকারিসহ ৬জনকে জিম্মি করে তাদের পিকআপে তুলে পাশের জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে গলায় অস্ত্র ধরে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ আট হাজার টাকা, মোবাইল ফোন, একটি টিভি লুটে নেয়। পরে তাদের কাছ থেকে আরও ২০হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে আদায় করে। আরো টাকার আশায় ডাকাতরা ৪জনকে জিম্মি রেখে দু’জনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। পরে ডাকাতদলটি আরো ডাকাতি করতে মহাসড়কের পাশে অবস্থান করতে থাকে। আমরা ছাড়া পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কিছুদুর এগিয়ে এলাকাবাসীকে জানাই। পুলিশ এলাকাবাসির কাছ থেকে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে অভিযান চালায়।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, রাতে পুলিশ আহতাবস্থায় এসআই জহিরুল ইসলাম ও শরীফকে এ হাসপাতালে নিয়ে আসে। এদের মধ্যে জহিরুলের পেটের বাম পাশ ঘেঁষে গুলি চলে যাওয়ায় চামড়ায় ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তিনি আশংকামুক্ত। অপর ব্যক্তি শরীফকে এ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে।