প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একদিনে পাঁচজন বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটেছে। এদের মধ্যে তিনজন নারী ও দুজন পুরুষ। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশির সংখ্যা দাঁড়াল ৯ জনে। জানা যায়, এলমাস্ট হাসপাতালে আব্দুল বাতেন (৬০), নূরজাহান বেগম (৭০) এবং ৪২ বছরের এক নারী মারা গেছেন। প্লেইনভিউ হাসপাতালে নর্থওয়েলে এটিএম সালাম (৫৯) ও ওজন পার্কের জসিম উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী করোনাভাইরাসে মারা গেছেন।

এর আগে গত ২৩ মার্চ মারা গেছেন আমিনা ইন্দ্রালিব তিশা (৩৮) ও মোহাম্মদ ইসমত (৬৯)। আগের সপ্তাহে মারা গেছেন মোতাহের হোসেন ও মোহাম্মদ আলী নামের আরও দুজন বাংলাদেশি।

আব্দুল বাতেনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সুনাইমুড়ি, তিনি ব্রুকলিনে বসবাস করতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৃত ৪২ বছরের নারীর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়, তিনি এস্টোরিয়ায় বসবাস করতেন। রংপুরের এটিএম সালাম ছিলেন ওয়েস্টর বে লং ল্যান্ড এলাকায়। ঢাকার মোহাম্মাপুরের নূরজাহান বাস করতেন এলমাস্ট এলাকায়।

মৃতের স্বজনরা জানান, হাসপাতাল থেকে মরদেহ পেতে আগের চেয়ে এখন বেশি সময় লাগছে। প্রায় ২/৩ দিন সময় লাগছে প্রতিটি লাশ হাতে পেতে।

এদিকে, চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস মহামারি আরও খারাপ রূপ নেবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। শহরের মেয়র বিল ডে ব্ল্যাসিও বলেন, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যেই এর মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আমরা যদি আরও ভেন্টিলেটর না পাই, লোকজন মরতে শুরু করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই অঙ্গরাজ্য ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস প্রকোপের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সারা দেশে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তার অর্ধেকই এই অঙ্গরাজ্যের। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছে ৪শ’য়ের মতো। সারা বিশ্বে আক্রান্তের তুলনায় নিউইয়র্কে আক্রান্তের হার পাঁচ শতাংশ।

শনিবার অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর এন্ড্রু কোমো জানিয়েছেন, সেখানে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মাত্র একদিনেই এই সংখ্যা বেড়েছে চার হাজার। ব্ল্যাসিও বলেছেন, ‘সকল আমেরিকানের সত্য জানার অধিকার আছে। পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে এবং আসল কথা হচ্ছে এপ্রিল ও মে মাসে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’

পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি ঘোষণা অনুমোদন করেছেন, যার ফলে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে কয়েকশ’ কোটি ডলারের সহায়তা পাবে। তারপরেও ব্ল্যাসিও ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেছেন, ভাইরাসটি মোকাবেলায় যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। ‘আমাকে বলতেই হবে : প্রেসিডেন্ট যদি ব্যবস্থা না নেন, লোকজনকে মরতে হবে, তারা হয়ত বেঁচে থাকত।’

১৯৩০ দশকের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দার পর যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বড় এক সঙ্কট তৈরি হতে যাচ্ছে।’

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় ওয়াশিংটনের জন্যও তিনি একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার জন্যও একই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ‘আমেরিকানদের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা সবাই এক কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে আছি।’

পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। এসব সামগ্রী দ্রুত কমে আসার কথা জানিয়েছেন নিউইয়র্কের চিকিৎসকরাও। তারা বলছেন, হাসপাতালে যেসব ডাক্তার ও নার্স এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাদের নিরাপত্তার জন্যও সামগ্রীর অভাব দেখা দিয়েছে। অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের গভর্নররাও একই ধরনের ঘাটতির কথা জানিয়েছেন।