প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ সঙ্কটময় সময়ে আমাদের সহনশীল এবং সংবেদনশীল হতে হবে। কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন না। আজ বুধবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাসের সংকটময় সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার প্রস্তুত আছে। এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেশের মানুষকে এই প্রাণঘাতী সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজারে কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে সরবরাহ চেইন অটুট রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করবেন না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। সর্বত্র বাজার মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীরও কাজ করে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।

তিনি গুজব রটনাকারীদের সতর্ক করে বলেন, কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমাদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিম্নআয়ের ব্যক্তিদের ‘ঘরে-ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা দেয়া হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেয়া হবে। জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভাসানচরে এক লাখ মানুষের থাকার ও কর্মসংস্থান উপযোগী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে কেউ যেতে চাইলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, গরিব মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একইভাবে বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবাও দেয়া হচ্ছে। আমি নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আপনারা ইতোমধ্যেই জেনেছেন। তবু আমি কয়েকটি বিষয়ের কথা আবারও উল্লেখ করছি। দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টার গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। সকল পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনও রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২৬-এ মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

‘কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে। গতরাত থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখবে। ২৪-এ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে। এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করছেন। আপনারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই অবস্থান করুন।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে, যারা জনগণকে সেবা দেবেন। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সঙ্কটময় সময়ে আমাদের সহনশীল এবং সংবেদনশীল হতে হবে। কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন না। বাজারে কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে সরবরাহ চেইন অটুট রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়াবেন না। জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না। সর্বত্র বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।