নভেল করোনা ভাইরাস (COVID-১৯) পরিস্থিতি নিয়ে বিশে^ যখন টাল মাটাল অবস্থা বিরাজ করছে, ঠিক তখনই দেশীয় উদ্ভিদ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে একটি কৌশল আবিষ্কার করেছেন গাজীপুরস্থ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (ডুয়েট) তিন গবেষক। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ কৌশলটি আবিষ্কার করার দাবি করেন ডুয়েট’র ওই তিন গবেষক। ডুয়েট’র এ তিন গবেষক হলেন- যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সাহিদ ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল কাশেম।

গবেষক দলের প্রধান ডুয়েট’র যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ডুয়েট’র গবেষকগণ নভেল করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন প্রোটিন সমূহ পর্যবেক্ষণ করে তাদের প্রকৃতি ও নেতিবাচক দিকসমূহ নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন। গবেষণাকালে করোনা ভাইরাসের প্রোটিনগুলো পর্যবেক্ষণ করে তাঁরা দেখতে পান যে প্রোটিনগুলোর মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা শ^াস নালীসহ মানবদেহের ক্ষতি করতে সক্ষম। এমনকি মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এইসব রাসায়নিক উপাদানসমূহ নিবিড়ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও অনুসন্ধান করেন গবেষকরা। তাঁরা ভাইরাসের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক গ্রুপ যেমন কার্বোক্ষিল ও এমাইনো গ্রুপ থাকার প্রমাণ পান। গবেষণাকালে তারা এসব রাসায়নিক গ্রুপের উপাদানগুলোকে অকার্যকর ও নিষ্ক্রিয় করতে অন্যান্য রাসায়নিক গ্রুপের প্রভাব রয়েছে বলে প্রমাণ পান। এ অবস্থায় গবেষকগণ দেশীয় ও সহজলভ্য রাসায়নিক গ্রুপের বিভিন্ন উৎস নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে থাকেন। এটি করতে গিয়ে তাঁরা দেখেন যে আমাদের দেশের বিভিন্ন উদ্ভিদের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে হাইড্রক্সিল গ্রুপের এই উপাদানগুলি বিদ্যমান রয়েছে। যা একটি মেকানিজম অনুসরণ করে করোনা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। এখানে কার্বো অক্সাইল গ্রুপ এবং এমাইনো অক্সাইল গ্রুপকে কার্বোক্সিল গ্রুপ নিষ্ক্রিয় করতে পারে। পরবর্তীতে এসব উদ্ভিদকে প্রথমে এক্সট্র্যাক্ট করা হয় ও স্ট্রাকচারাল প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে পজেটিভ ফল পান গবেষকগণ। গবেষকদল তাদের গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে সেটিকে ওষুধ বা প্রতিষেধকে রূপান্তর করতে মাইক্রোবায়োলোজি ও ফার্মাসিস্ট বিশেষজ্ঞদের কাজ করতে হবে ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এর সুফল তাদের আনতে হবে।

ডুয়েট’র গবেষকগণ প্রাথমিকভাবে উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে কেমিক্যাল গ্রুপকে ব্যবহার করেছেন, যা করোনা ভাইরাসের খারাপ প্রোটিনগুলোর উপর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলে মতামত পোষণ করেন। তাদের দাবি, এসবের সঙ্গে আরো কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যুক্ত করেই করোনা নিরোধক ওষুধ তৈরি করা যেতে পারে। এই গবেষণার খুঁটিনাটি বিভিন্ন দিক ও পরীক্ষাগারের বিভিন্ন পরীক্ষা সমূহ এখন চলছে। তাঁরা মনে করেন এখান থেকে ওষুধ বা প্রতিষেধক তৈরীর আগে পুষ্টিবিদদের মাধ্যমে এই সব উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক গ্রুপের একটি তালিকা সরকার প্রকাশ করতে পারেন। এতে সাধারণ মানুষ এই খাদ্যগুলি তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রেখে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী। শুধু করোনা নিরোধই নয়, ভাইরাস থেকে মানবদেহকে রক্ষা করতে ইলেক্ট্রো-ইস্পান পদ্ধতি ব্যবহার করে এন্টি-ভাইরাল ন্যানো-মেমব্রেনে তৈরী করার দাবি করেছেন গবেষকরা। গবেষকদের এ ধারণা চিকিৎসক সহ সাধারণ মানুষের এন্টি-ভাইরাল পোশাক, গ্লাভস ও মাক্সসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরিতে সহায়তা করবে। গবেষণায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রতিরোধক ওষুধ তৈরির প্রাথমিক সফলতা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা।

গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সাহিদ জানান, ডুয়েট’র এ গবেষকদলটি তাদের গবেষণা ফলাফল ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক জার্নালে সাবমিট করেছেন। তাঁরা আশাবাদী তাদের এই পরিবেশ ও মানব বান্ধব আবিষ্কার বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর মানুষের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করবে। সেইসঙ্গে তাঁরা গবেষণাটির বিভিন্ন দিক নিয়ে অন্যদেরও কাজ করার আহ্বান জানান। গবেষকগণ তাদের এ গবেষণাকে দ্রুত কাজে লাগাতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি করোনা নিয়ে বিশে^র বর্তমান পরিস্থিতিতে এন্টি-ভাইরাল পোশাক, গ্লাভস ও মাক্সসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরিতে প্রযুক্তি সহায়তা দিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।