করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর যারা পুরোপুরি সেরে ওঠেন তাদের রক্তে এ ভাইরাস রোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এ কারণে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের রক্তরস আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছেন ব্রিটেনের চিকিৎসকরা। তারা এই রক্তরস রোগীদের শরীরে প্রবেশ করাবেন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউমোনিয়ার মতো সমস্যা নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহারের সুপারিশ করবেন তারা। এতে করে রোগীর অবস্থার অবনতি হয়ে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভেন্টিলেটর দেয়ার মতো জটিল প্রক্রিয়ায় যাওয়ার হার কমবে বলে আশা করছেন তারা।

এছাড়া কভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবায় যারা ঘনিষ্ঠভাবে নিয়োজিত যেমন জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার (এনএইচএস) কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও একই ভাবে রক্তরস দেয়া হতে পারে। যাতে এ ভাইরাস আরো বেশি বিস্তার ঘটিয়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে না পারে।

ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অধ্যাপক ডেভিড টাপ্পিন এ পদ্ধতি ব্যবহারের আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন চেয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চে আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিবেচনা করা উচিত। অন্যান্য পরীক্ষার অনুমোদনের জন্য সাধারণত কয়েক মাস বা বছর সময় লাগে।

এই পদ্ধতির মূল ভিত্তি হলো শরীরের অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া। যারা কভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছেন বা উঠবেন তাদের রক্তরসে সেই অ্যান্টিবডি থাকবে। ফলে তাদের শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হবে। এখন চিকিৎসকদের কাজ হলো অসাধারণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এমন ‘হাইপার ইমিউন’ লোকদের খুঁজে বের করা যারা রক্তদানে রাজি আছেন। এই লোকদের রক্তরস বা তথাকথিত কনভালসেন্ট প্লাজমা দেয়া হবে কভিড-১৯ আক্রান্ত এবং তাদের সেবায় নিয়োজিতদের শরীরে।

এ ব্যাপারে অ্যাকাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের প্রেসিডেন্ট ও কিংস হেলথ পার্টনার্সের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক রবার্ট লেচলার বলেছেন, কিংস কলেজ লন্ডন এবং লন্ডনের প্রধান তিনটি হাসপাতাল জানিয়েছে তারা সমান্তরালভাবে এ পরীক্ষা চালাতে চান। এনএইচএসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সংস্থার ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগ এরই মধ্যে সম্ভাব্য রক্তদাতাদের অনুসন্ধানে নেমেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১০০টি ল্যাবরেটরি অনেক আগে থেকেই যৌথভাবে কনভালসেন্ট প্লাজমা তৈরির জন্য কাজ করছে। তারা এরই মধ্যে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের অনুমতিও পেয়ে গেছে। তারা এখন রোগীদের শরীরে এই রক্তরস ব্যবহার করতে পারবে। মূলত এই দৃষ্টান্ত থেকেই যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আরটুরো ক্যাসাডেভাল বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে শরীরে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আগেই প্রাথমিক পর্যায়েই অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা গেলে বেশি কার্যকর হবে। এতে দ্রুততার সঙ্গে ও কার্যকরভাবে শরীর থেকে ভাইরাস দূর করা যাবে। তিনি আরো বলেন, কনভালসেন্ট প্লাজমা শরীরে প্রয়োগ করলে আশা করা যায়, কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত যে কেউ করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকবেন।